মস্কো সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট, ইউক্রেনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্চ ২০, ২০২৩, ০৪:৩০ পিএম

মস্কো সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট, ইউক্রেনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ

ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলা যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার জন্য সোমবার মস্কোয় সফর করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সফরের আগে প্রেসিডেন্ট শি সংকট থেকে ‘যৌক্তিক উপায়ে’ বের হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করে বলেন, এই সংকটের সহজ উপায়ে সমাধানে পৌঁছানো সহজ হবে না।

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর শি জিনপিং হতে চলেছেন প্রথম নেতা যিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত করবেন।  

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়,  ক্রেমলিন বলছে, দুই নেতা এই সাক্ষাতের সময় একটি “সার্বিক অংশীদারিত্ব এবং কৌশলগত সহযোগিতা” নিয়ে কথা বলবেন।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর এটিই হচ্ছে চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম রাশিয়া সফর। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে সরাসরি সমর্থন না দিলেও পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ধরে রেখেছেন শি জিনপিং।

চীন এখন রাশিয়ার বড় মিত্র। বেইজিং এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের এই প্রস্তাবের পর এখন শি জিনপিং মস্কো সফরে যাচ্ছেন। তবে চীনের এই মধ্যস্থতার প্রস্তাবে পশ্চিমা দেশগুলোর দিক থেকে সেরকম সাড়া পাওয়া যায়নি।

শি-পুতিন বৈঠকে ইউক্রেনসহ পশ্চিমাদের উদ্বেগ

চীনা পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হুয়া চুনিইং জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে চীন একটি ‘নিরপেক্ষ এবং ন্যায্য’ অবস্থান নেবে এবং শান্তির লক্ষ্যে আলোচনার জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এ কথা মানতে নারাজ। শুদু তাই নয়, ওই দেশগুলো রাশিয়ার কাছে অস্ত্র সরবরাহ না করতে চীনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।

পশ্চিমাদের উদ্বেগ, দুই নেতার মুখোমুখি সাক্ষাৎ বেইজিং-মস্কোর ক্রমবর্ধমান সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক যোগ করবে। কারণ পশ্চিমাদের সঙ্গে দুই দেশেরই সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চীনের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমাদেশগুলো দেশটিকে কূটনীতিকভাবে বয়কট করেছে।

ইউক্রেনে আগ্রাসন নিয়ে পশ্চিমাদের চাপের মুখে রয়েছে রাশিয়াও। পশ্চিমারা যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন শি জিনপিংয়ের এই সফর দুই শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সুসম্পর্কেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এটি ভাল চোখে দেখছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো।  

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মস্কোর সফর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউক্রেনও। জেলেনস্কি প্রশাসনের দাবি, এই সফরে রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে চীন সিদ্ধান্তে আসতে পারে।

পুতিনের ক্রিমিয়া ও মারিওপল সফর  

এদিকে, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই রবিবার ইউক্রেনে দখলকৃত মারিওপল শহর সফর করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।  

জাতিসংঘের একটি তদন্ত দলের প্রতিবেদন প্রকাশের পরই পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।  আইসিসির অভিযোগ, ইউক্রেন হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, শিশু অধিকার হরণসহ বড় বড় অপরাধ করেছে রাশিয়া। তবে আইসিসির পরোয়ানাকে প্রত্যাখান করে এরই মধ্যে ক্রেমলিন জানিয়ে দিয়েছে, ওই আদেশ মানতে রাশিয়া বাধ্য নয়। কারণ তারা এ আদালতকে মানে না।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে শুরু হওয়া বিশেষ সামরিক অভিযানে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর দখল করে নেয় বন্দরনগরী মারিওপল। গত বছরের মে মাস থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি নিয়ন্ত্রণ করছে রুশ বাহিনী।

রুশ বার্তা সংস্থা তাসের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন হেলিকপ্টারে করে মারিওপলে যান এবং নিজে গাড়ি চালিয়ে সেখানকার বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেন। শুধু তাই নয়, গাড়ি থামিয়ে শহরের বাসিন্দাদের সাথেও কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

এর আগে, ২০১৪ সালে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের অপর বন্দর শহর ক্রিমিয়া সফর করেন ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রিমিয়া সফরের একদিন পেই মারিওপল পরিদর্শনের খবর দেয় দেশটির গণমাধ্যম।

শনিবার রুশ মিডিয়া জানায়, ইউক্রেনের কাছ থেকে কৃষ্ণ সাগরীয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অধিগ্রহণের নবম বার্ষিকী উপলক্ষে সেখানকার সেভাস্তোপল বন্দরনগরী পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। মস্কো-নিযুক্ত স্থানীয় গভর্নর মিখাইল রাজভোজায়েভ এসময় পুতিনের সাথে ছিলেন। 

 

 

Link copied!