যুদ্ধাপরাধ: পুতিনের বিচার কি আদৌ সম্ভব হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্চ ১৮, ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম

যুদ্ধাপরাধ: পুতিনের বিচার কি আদৌ সম্ভব হবে?

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিকদের বেআইনিভাবে নির্বাসন এবং রাশিয়ায় স্থানান্তর করার জন্য পুতিনের  বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে ওই পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে-পুতিন কি সত্যিই গ্রেফতার হবেন? পুতিনের বিচার কি আইসিসি আদৌ করতে পারবে?

পুতিনকে কি গ্রেফতার করা যাবে?

পুতিনের বিচার করার ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি একটি প্রথম ধাপ। জাতিসংঘ স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করে যে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য রাশিয়ান নেতাকে অভিযুক্ত করার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আইসিসি কারোর কিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তাকে গ্রেফতার করতে পারে সংশ্লিষ্ট দেশটির সরকার। রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন  তার দেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতা উপভোগ করছেন। রাশিয়া এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, আইসিসির পরোয়ানায় তাদের কিছু আসে যায় না।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন, আইসিসির আদেশ মানতে রাশিয়া বাধ্য না। কারণ তারা এ আদালতকে মানে না। তাই পুতিনকে আইসিসির কাছে কোনোভাবেই হস্তান্তর করবে না ক্রেমলিন। যতদিন তিনি রাশিয়ায় থাকবেন ততদিন তাকে গ্রেপ্তার হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। অবশ্য দেশ ছেড়ে গেলে পুতিনকে আটক করা হতে পারে।

তবে  রুশ প্রেসিডেন্টের  চলাফেরায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সীমিত হওয়ায় তিনি এমন কোনো দেশে যাবেন না যে দেশ তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায়। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর পুতিন মাত্র ৮টি দেশ সফর করেছেন। এসব দেশগুলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। এর বাইরে তিনি শুধুমাত্র ইরান ভ্রমণ করেছেন।

গত বছরের জুলাই মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ইরান ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়াকে ড্রোনসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করছে। তাই দেশটি কোনোভাবেই চাইবে না পুতিনকে বিপদে ফেলতে। 

পুতিনকে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে?  

১৯৯৭ সালের ১৭ জুলাই গৃহীত রোম নীতিমালার আলোকে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। তবে এর নিজস্ব কোনো বাহিনী না থাকায় অভিযুক্তদের ধরতে বা দণ্ড কার্যকর করতে পারে না। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও অপরাপর অন্যান্য রাষ্ট্রকে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আহ্বান জানায়। রাশিয়ার পাশাপাশি চীন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এ আদালতকে স্বীকৃতি দেয়নি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন রোম নীতিমালায় স্বাক্ষর করলেও প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তা প্রত্যাহার করে নেন।

আইসিসি’র সংবিধান অনুযায়ি, আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর তার নিজস্ব ফৌজদারি এখতিয়ার প্রয়োগ করা প্রতিটি রাষ্ট্রের কর্তব্য। আইসিসি কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারে যেখানে একটি রাষ্ট্র তদন্ত করতে এবং অপরাধীদের বিচার করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। তাই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিচারের মুখোমুখি করা অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনকে গ্রেফতার না করে তার বিচার করবে না। কারণ অভিযুক্ত উপস্থিত না থাকলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করে না আইসিসি। তাই পুতিনের বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই।

আগে যাদের বিচার করেছে আইসি

আইসিসি এখন পর্যন্ত পুতিন ছাড়াও ৪০ জনকে অভিযুক্ত করেছে। তবে বেশিরভাগই  আফ্রিকান দেশের।  অভিযুক্তদের মধ্যে  ১৭ জনকে হেগে আটক করা হয়েছে। ১০ জনকে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আইসিসির বিচারে অভিযুক্ত হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন উগান্ডার বিদ্রোহী নেতা জোশেফ কোনি, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফি ও আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট লরেন্ট জিবাগবো।

অভিযুক্ত ৪০ জনের বিরুদ্ধে মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তবে পুতিনের বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ আনা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হারিস অবশ্য পুতিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে আইসিসির পরোয়ানা তাহলে কী?

তামিল করা না গেলে আইসিসি’র কেন এই গ্রেফতার পরোয়ানা? এমন গ্রেফতারি পরোয়ানার কী দরকার-এসব প্রশ্নই এখন দেখা দিচ্ছে।এটি আসলে আন্তর্জাতিকভাবে এবং রাশিয়ার মধ্যেই জনমতের ওপর পুতিনের বিরুদ্ধে প্রভাব ফেলার একটি কৌশল। পাশাপাশি পুতিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো পুতিনের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Link copied!