রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক একক বিশ্ব এখন আর নেই। শীতল যুদ্ধের সময় যখন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জয়লাভ করে, তখন তারা দাবি করেছিলো, তারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি, যাদের বিশ্বে কোন দায়-দায়িত্ব নেই, আছে কিছু স্বার্থ। তারা সেই স্বার্থগুলোকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এরপর থেকেই একদেশ কেন্দ্রীক যাত্রা চলছিলো যা বিশ্বকে অস্থির করে তোলে। অবস্থা এখন আর আগের মতো নেই।
বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত রাশিয়ার বিখ্যাত সেন্ট পিটার্সবার্গে ইন্টারন্যাশনার ইকোনোমিক ফোরামে (ইইএফ) দেওয়া বক্তৃতায় রুশ প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন। একদিন আগেই ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত করতে ফ্রান্স, জার্মানী ও ইটালির নেতারা কিয়েভ সফরে যান। সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুতই ইউক্রেনকে ইইউ এর আবেদনকারীর মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন নেতারা। এর একদিন পরই পুতিনের এ বক্তব্য গোটা বিশ্বের কাছেই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার হামলার কারণে পুতিন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৯০ মিনিট পরে বক্তব্য দেন। কনফারেন্স সিস্টেমে সাইবার অ্যাটাকটি আসে। কারা হামলাটি চালিয়েছে নিশ্চিত করে বলা না গেলেও এক সপ্তাহ আগে ইউক্রেনের একটি হ্যাকার গ্রুপ ইঙ্গিত দিয়েছিলো; তারা সেন্ট পিটার্সবার্গের ফোরামকে টার্গেট করতে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর আদেশ দেওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন পুতিন। শুক্রবার (১৭ জুন) পুতিন তার বক্তব্যে কোন ধরণের সময়ক্ষেপন না করে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদের আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, অতীতে এই দেশগুলো নিজেদের ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনা বিশ্বে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। তারা মনে করে, তারা সবকিছু জিতে গেছে, পৃথিবীর বাকি দেশগুলো তাদের অধীনস্ত ( কলোনি) এবং অন্যান্য দেশগুলোতে যারা বাস করে তারা সব দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। ইউক্রেনে হামলা হওয়ায় পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছে বলেও জানান পুতিন।
পুতিন বলেন, এই সুযোগে সম্পূর্ণ উন্মাদের মতো রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংস করার লক্ষ্যে একাট্টা হয়েছে পশ্চিমা নেতারা। তবে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখার যে দূরভিসন্ধি তারা করেছিলো তাতে তারা সফল হয়নি। ধীরে ধীরে নিজেদের অর্থনীতি আবারও শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছে রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলার বিষয়ে পুতিন বলেন, সম্প্রতি পশ্চিমাদের সঙ্গে কিয়েভের কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে যে সখ্যতা গড়ে উঠেছে তা নিয়ে রাশিয়া সঙ্কিত। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য হয়েই ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বক্তৃতায় ডোনবাসের জনগণকে নিজের জনগণ অভিহিত করে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের ডোনবাসে যে রুশভাষী নাগরিকরা রয়েছেন, গত ৮ বছর ধরে পশ্চিমাদের সমর্থনে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে কিয়েভের প্রশাসন। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেবার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডোনবাসের অন্তর্ভুক্ত দুটি এলাকা ডোনেস্ক এবং লুহানস্ক রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার রুশপন্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ইউক্রেনের বর্তমান প্রশাসন। এসব কারণে ২০১৯ সালে ওই অঞ্চলের রুশপন্থীদের জন্য রাশিয়ার পাসপোর্ট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিলো। তবে পরে তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাকেই রাশিয়া বেশি কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে। ইউক্রেনকে সদস্য করতে ইইউ এর সাম্প্রতিক পদক্ষেপের জবাবে পুতিন বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে; পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ই তাদের স্বাধীনতা, নিজস্বতা হারিয়ে বসেছে। নিজেদের জনগণের জন্য ভোগান্তি এনে তারা অন্য কারো কথায় চলছেন।