কীভাবে জাহাজটি অপহরণ করল সোমালীয় দস্যুরা?

ফাহিম রেজা শোভন

মার্চ ১৩, ২০২৪, ০৮:৪০ পিএম

কীভাবে জাহাজটি অপহরণ করল সোমালীয় দস্যুরা?

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ কার্গো জাহাজটিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। ভারত মহাসাগরে প্রায় ৫০ জন সোমালীয় জলদস্যু জাহাজটিকে অপহরণ করেছে।

জাহাজে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের সবাই জিম্মি। অপহৃত চট্টগ্রামের আইনুল হক অভি তার মায়ের কাছে ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়েছেন, ৫ মিলিয়ন ডলার বা ৫৫ কোটি টাকা দিলেই মিলবে সবার মুক্তি।

তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চাওয়া কোনো মুক্তিপণ নয়।

মুহুর্মুহু গুলি ছুড়ে ভয় দেখাচ্ছে দস্যুরা। এর মধ্যে নতুন চিন্তার কারণ হয়েছে পর্যাপ্ত খাবার না থাকাসহ সুপেয় পানির সংকট।

দস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটিতে ২৫ দিনের মতো খাবার রয়েছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি রয়েছে প্রায় ২০০ টন।

জাহাজের চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহকে এক লোমহর্ষক অডিও বার্তায় বলতে শোনা যায়, জাহাজে খাবার পানির আছে অল্প। যা দিয়ে আর ২০-২৫ দিন টিকে (বেঁচে) থাকা যাবে। কার্গোগুলো একটু এদিক-সেদিক হলেই অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ বিপদ আসতে পারে। কারণ জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে।

৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের সেই অডিও বার্তায় জিম্মিদশার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন জাহাজের চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ। দেশে পরিবারকে দেখেশুনে রাখার আকুতি জানিয়েছেন।

সোমালীয় জলদস্যুরা জাহাজে ওঠার পর কার সঙ্গে কী আচরণ করেছে সেই বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি। ওই কর্মকর্তা জানান, সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট জাহাজের দিকে আসতে দেখে অ্যালার্ম বাজানো হয়। সহায়তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যু চলে আসে।

জাহাজে উঠেই দস্যুরা ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। এরপর সবাইকে একসঙ্গে করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেকেন্ড অফিসারকে হালকা মারধর করেছে তবে আর কারও গায়ে হাত তোলেনি তারা।

এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যু আসতে থাকে। সবার হাতেই প্রায় অস্ত্র ছিল। নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। এ সময় তাদের বোটের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি জাহাজের পাম্প দিয়ে তেল নিয়ে নেয়। এরপর জাহাজের ইঞ্জিনও বন্ধ করে দেয় তারা।

অডিও বার্তায় আরও জানানো হয়, এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছে। জাহাজে থাকা সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন। দ্রুত টাকা না দিলে মেরে ফেলার কথাও বলছে তারা।

মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এই জাহাজ। গতকাল মঙ্গলবার উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকা কয়লাবাহী জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালীয় জলদস্যুরা। কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। জাহাজের ক্যাপ্টেনের নাম আব্দুর রশিদ।

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। চট্টগ্রামের কেএসআরএম বা কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন এই কার্গোবাহী জাহাজটি।

Link copied!