বিএনপির টানা তিন দিনের দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন আজ (২ নভেম্বর)। শেষ দিনের অবরোধের শুরু হয়েছে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে। সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় আজমপুর এলাকার উড়ালসড়কের নিচে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, পরিস্থান পরিবহন নামের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় গিয়ে আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের তথ্য এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
এছাড়াও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ায় দুটি বাস ভাঙচুর ও একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভোর চারটার দিকে উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের বনগ্রাম গণবিদ্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে রাত তিনটার দিকে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় বাস টার্মিনালে রাখা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বাসের অধিকাংশ পুড়ে যায়।
এর আগে গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর হয়। পাশাপাশি সংঘর্ষ-হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
ঢাকায় ৪টিসহ সারা দেশে মোট ১৩টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে পণ্যবাহী চারটি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঈশ্বরদীতে চলন্ত ট্রেনে ককটেল ও পেট্রলবোমা ছোড়া হয়েছে। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
তবে গতকাল ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোয় আগের দিনের চেয়ে বেশি গণপরিবহন চোখে পড়েছে। ব্যক্তিগত যানও দেখা গেছে কিছু। তবে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। গতকালও দূরপাল্লার বাস রাস্তায় নামেনি।
লোকাল বাস ও থ্রি-হুইলারে যাতায়াত করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। ট্রেন যথারীতি চলেছে। তবে যাত্রী ছিল কম। নৌপথেও ছিল একই অবস্থা। লঞ্চ, ফেরি চললেও যাত্রী খুব একটা দেখা যায়নি। সড়ক-মহাসড়কে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতি। বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের।
মঙ্গলবার অবরোধের প্রথম দিনে সংঘর্ষে আহত কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আশিক মিয়া (৫০) নামের এক চা-বিক্রেতা গতকাল মারা গেছেন। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনের সহিংসতায় পুলিশের এক সদস্যসহ আটজনের মৃত্যু হলো।
বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে গতকালও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় অবরোধকারীরা। গতকাল বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে পুলিশি হামলা, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারসহ সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরে জামায়াত ইসলামীও তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, লেবার পার্টি, এনডিএমসহ সরকার পদত্যাগের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দলগুলো আলাদাভাবে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।