সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, “আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন। অর্থাৎ, যেমন আছে, তেমন থাকবে। কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্রের ভিত্তিতে যে সব সার্কুলার দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কোটা থাকছে না।”
এর আগে, বুধবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানির জন্য বেলা সাড়ে ১১টায় সময় নির্ধারণ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিশেষ চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম মঙ্গলবার (৯ জুলাই) শুনানির জন্য এই দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে, ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ শুনানি মুলতবির আদেশ দেন। ওইদিন রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী না থাকায় এক আবেদনে সর্বোচ্চ আদালত ‘নট টুডে’ আদেশ দেন। পাশাপাশি হাইকোর্ট রায় পেলে রাষ্ট্রপক্ষকে রেগুলার আপিল (সিপি) দায়ের করতে বলা হয়।
বেসরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল হয়।
আরও পড়ুন: আদেশ প্রত্যাখ্যান: আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
এর আগে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড ও ১০ম-১৩তম গ্রেড পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়। নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি পাঁচ ও প্রতিবন্ধীদের এক শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।
এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বাতিল চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে। গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার আদেশ দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ৪ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে নিয়মিত আপিল করতে বলেন। ফলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোট বহাল থাকছে।
২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফার দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৬ জুলাই) বেলা আড়াইটা থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব হলের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি- বুয়েট, ইডেন কলেজ হয়ে বেলা পৌনে পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।