অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি পৃথক মামলায় ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বুধবার সকালে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বুধবার সকালে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তারা জামিনের আবেদন করলেও ট্রাইব্যুনাল তা নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন— র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন এবং কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে)।
এ ছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম এবং বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকীকেও একই আদেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রসিকিউশনের তথ্যমতে, এই তিন মামলায় মোট ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন। প্রথম মামলায় ১৭ জন, দ্বিতীয়টিতে ১৩ জন এবং তৃতীয়টিতে ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে হাসিনার নাম দুটি মামলায় রয়েছে।
আসামিদের মধ্যে ২৫ জন সেনা কর্মকর্তা থাকলেও বর্তমানে ১৫ জন হেফাজতে আছেন।
তিনটি মামলার দুটি দায়ের হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত গুম, র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টাররোগেশন (টিএফআই) ও সেনাবাহিনীর জয়েন্ট ইন্টাররোগেশন সেল (জেআইসি)–এ আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায়।
অন্য মামলাটি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় ২৮ জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা হয়।
সকালে সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের সময় রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট মাজারগেট ও পল্টন এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন এসব এলাকায়।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত গুমের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ট্রাইব্যুনাল।
এরপর ১১ অক্টোবর সেনা সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে রয়েছেন।
বুধবার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়।