সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি হত্যা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলা করা হয়েছে মিরপুর, রামপুরা ও সূত্রাপুর থানায়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই তিনটি মামলার অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। এতে মিরপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদার, রামপুরার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল মিয়া ও সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা জুনিয়র টেকনিশিয়ান এলেম আল ফায়দি নিহত হন।
৫ আগস্ট দেশছাড়ার পর এই নিয়ে ৩২টি মামলা হলো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা
ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন নিহত ফিরোজ তালুকদারের স্ত্রী রেশমি আক্তার।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি মিরপুর গোলচত্বর-১০ এলাকায় অবস্থান করা ফিরোজ তালুকদারের গায়ে লাগে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রামপুরায় গুলি করে হত্যা
বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার স্ত্রী শারমিন আক্তার। মামলার অন্য আসামিরা হলেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, জুনাইদ আহ্মেদ পলক, মুহিববুর রহমান, ওয়াকিল আহমেদ, শেখ ফজলে শামস পরশ, মইনুল হোসেন খান নিখিল, সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ, রিয়াজ মাহামুদ, সাগর আহমেদ, রিয়াজুল ইসলাম, এস এম মাহিন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রিপন সরদার, হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশিদ, আসাদুজ্জামান, হারুন অর রশিদ, ইকবাল হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, হায়াতুল ইসলাম, সাব্বির রহমান, মশিউর রহমান ও কাউসার আহম্মেদ খান।
মামলায় বাদীর অভিযোগ, তার স্বামী রাসেল মিয়া একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। রাসেল মিয়ার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। কোটাবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে রাসেল মিয়া অংশ নিয়েছিলেন। গত ১৯ জুলাই বেলা দুইটার দিকে রামপুর গোলচত্বরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি, তথা যৌথ বাহিনীর ছোড়া গুলি রাসেল মিয়ার বুকে লাগে। পরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, পারস্পরিক যোগসাজশে আসামিরা ছাত্রসমাজ ও জনসাধারণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যৌথ বাহিনী সেদিন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করে রাসেল মিয়াকে হত্যা করে।
সূত্রাপুরে মাথায় গুলি করে হত্যা
জুনিয়র টেকনিশিয়ান এলেম আল ফায়দি হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুল আলম।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন- ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, ইকবাল হোসেন, আবু সাঈদ খোকন, সোলায়মান সেলিম, আবদুর রহমান মিয়াজী, রঞ্জন বিশ্বাস, আরিফ হোসেন ছোটন, ইব্রাহিম ফরাজী, আক্তার হোসেন, বেলায়েত হোসেন, ফারুক হাওলাদার, রাহাত মোড়ল, আশিকুল ইসলাম, মিরাজ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, আনোয়ারা বেগম, মোয়াজ্জেম, জুয়েল, জাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, ফারহান লাবিব, সাজবুল, ইব্রাহিম সালিন, মীর মুকিত, অর্জুন বিশ্বাস, মাহিমুর রহমান, মিনুন মাহফুজ ও শাহরুখ আলম।
মামলায় বাদীর অভিযোগ, গত ১৯ জুলাই বেলা দুইটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনাসহ অন্য ব্যক্তিদের নির্দেশে সেদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ পুলিশ নিরীহ ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে এলেম আল ফায়দির মাথায় গুলি লেগে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।