ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের ভেতর নানান ধরনের মতবাদ আছে। অনেকে ভূত না দেখেও বিশ্বাস করে তার অস্তিত্ব। আর কেউবা ভূত দেখেছেন বলেন। ভূত নিয়ে কম গবেষণা করেননি বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ দিয়ে তারা জানিয়েছেন ভূত বলে কিছু নেই। কিন্তু তার পরেও কিছু মানুষ নাছোড়বান্দা। অনেকে দাবি করেন নিজ চোখে ভূত দেখার। যদিও ভূত দেখার ব্যাখ্যা দিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। বিবিসি থ্রির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য।
ভূত দেখার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন। প্যারানরমাল দুনিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন ড. ক্রিস ফ্রেঞ্চ এবং ড. শেন রজার্স। ভূত দেখার কারণ হিসেবে মানসিক ও পরিবেশগত কিছু দিক তুলে ধরেছেন তারা। ড. ক্রিস ফ্রেঞ্চ লন্ডনের গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানোম্যালিস্টিক সাইকোলজি রিসার্চ ইউনিটের প্রধান। তাদের কাজ প্যারানরমাল ঘটনা নিয়ে গবেষণা করা।
ড. ক্রিস ফ্রেঞ্চ লন্ডনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ভৌতিক ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে বলেছেন স্লিপ প্যারালাইসিসের কথা । স্লিপ প্যারালাইসিসকে অনেকে ‘বোবায় ধরা’ বলে থাকেন। তিনি জানান, মানুষ যখন তার ঘুমের একটা বিশেষ পর্যায় র্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম)-এ পৌঁছায়, তখন আর মস্তিষ্ক শরীরকে নড়াচড়ার সংকেত পাঠায় না। আর ঠিক এই সময়টায় মানুষ কখনো জেগে উঠলেও নড়াচড়া করতে পারে না। স্লিপ প্যারালাইসিস হল স্বাভাবিক ঘুমের প্রক্রিয়ায় এক ধরনের ত্রুটি। এটা ভয়ংকর হতে পারে। আমার একজন ছাত্র আমাকে ঘুম থেকে উঠার বিষয়ে বলেছিল যে তার বিছানার পাশে একটি কালো বিড়াল তার দিকে তাকিয়ে হিস হিস করছে। কিন্তু এটা একটা উল্টানো বিড়ালের মাথার খুলি ছিল যার মুখ থেকে কালো পদার্থ ঝরছিল। স্লিপ প্যারালাইসিস থেকে হ্যালুসিনেশন অনেক মানুষকে ভূত দেখায়, মি. ক্রিস ব্যাখ্যা করেন।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এনএইচএস ওয়েবসাইট বলছে, স্লিপ প্যারালাইসিসের অন্যান্য কিছু স্বাভাবিক লক্ষণ হল, মনে হবে কেউ আপনার ঘরে আছে অথবা আপনাকে চেপে ধরে আছে। আর যেহেতু র্যাপিড আই মুভমেন্টের সময়টায় মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখে তাই এসময় হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিবিভ্রম হওয়া স্বাভাবিক।
অন্যদিকে, প্রায় সময় হলিউড-বলিউডের সিনেমায় দেখা যায় পুরোনো বাড়িতে ভূতের অস্তিত্ব। বিশেষ করে ভৌতিক পরিবেশে কালো ফাঙ্গাস দেখা যায়। যারা ভূত দেখেছেন তারাও এই কালো ফাঙ্গাস দেখলে ঘাবড়ে যান। ভুতুড়ে বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এই বিষয়টি নিয়েও বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিউইয়র্কের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ড. শেন রজার্স। তিনি ভুতুড়ে বাড়ি এবং ফাঙ্গাসের মধ্যে সংযোগের বিষয়টি নিয়ে বিশদ কাজ করেছেন। শেন এবং তার দল ভূতের অস্তিত্ব আছে বলে আলোচিত এমন ২৭টি জায়গায় কাজ করেছেন। এই দলটা ফাঙ্গাস এবং ভূতের উপদ্রবের সংযোগ খুঁজে পায়। ড. শেন বলেন, আমরা আমাদের নমুনা থেকে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে, পরিসংখ্যানগতভাবে ভুতুড়ে জায়গাগুলিতে ফাঙ্গাসের অস্তিত্ব একটা বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। তবে আমরা অনেক জায়গায় ফাঙ্গাসের অস্তিত্ব পেয়েছি যেগুলোর সঙ্গে ভূতের উপদ্রবের কোনো সংযোগ নেই। এমনকি আমার বাড়ির বেজমেন্টেও সমস্যা হয়েছে।
ড. শেন জানান, ল্যাব টেস্টে একটা ইঁদুরকে কালো ফাঙ্গাস দিয়ে দেখা গেছে তারা ভয় পাচ্ছে। এর কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্যাঁতসেঁতে বিল্ডিংয়ে যে ফাঙ্গাস দেখা যায় সেগুলো শ্বাসকষ্ট এবং চোখের জ্বালাপোড়ার কারণ। আর এ থেকেই অনেক সময় মানুষ ভূত দেখছে বলে থাকে। বাস্তবে ভূত বকে কিছু নেই। মানুষ তার মনের ভয় এবং পরিবেশগত কারণে ভূত দেখার কথা বলেন, এবং সেটাই বিশ্বাস করেন।