বর্তমানে রাজধানী থেকে উপজেলা শহর পর্যন্ত নারীদের জন্য আতঙ্কের নাম পার্লার, স্পা সেন্টার আর শপিং মলের ট্রায়াল রুমের গোপন ক্যামেরা। পোশাকের মাপ ঠিকঠাক হয়েছে কি না কিংবা সৌন্দর্যচর্চার জন্য এসব স্থানে গিয়ে ট্রায়াল রুম ব্যবহার করে বিপদে পড়ছেন নারীরা।
এসব ট্রায়াল রুমে গোপন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ধারণ করা হচ্ছে নারীদের স্পর্শকাতর ছবি কিংবা ভিডিও। নিরাপত্তার অজুহাতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলা হলেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি বা ফুটেজ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যাঁদের ভিডিও লুকানো ক্যামেরায় ধারণ করা হয়, তাঁরা তা মোটেও টের পান না, যা আদতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যটনবিষয়ক জনপ্রিয় কোম্পানি এয়ারবিএনবির তথ্যমতে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের বেশি অতিথি ভ্রমণকালে তাঁদের কক্ষে গোপন ক্যামেরা আবিষ্কার করেছেন।
তাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা অটুট রাখতে লুকানো ক্যামেরা শনাক্ত করার উপায় জানা থাকা জরুরি।
আয়না বা গ্লাস পরীক্ষা করুন: কোনও প্রাইভেট প্লেসে গেলে প্রথমেই সেখানকার আয়না কিংবা গ্লাস পরীক্ষা করে দেখুন। দেখবেন আয়নাটি কীভাবে বসানো আছে। আয়নাটি কী দেয়ালে ঝোলানো, নাকি দেয়ালে লাগানো? নাকি দেয়ালের সাথে একেবারে খোদাই করা অবস্থায় আছে? টু ওয়ে মিরর বা একপাশে আয়না ও অন্য পাশে স্বচ্ছ এমন গ্লাসগুলো সাধারণত দেয়ালে একেবারে খোদাই করা অবস্থায় থাকে।
আয়নাতে টোকা দিন: আপনার আঙুলের গিঁট দিয়ে আয়নাতে টোকা দিন। আয়না যেহেতু দেয়ালে বসানো আছে, সুতরাং নরমাল আয়না হলে তা সাধারণ ফ্ল্যাট আওয়াজ করবে। কিন্তু টু ওয়ে মিরর হলে আয়নায় আঘাত করলে ফাঁপা শব্দ করবে।
আয়নার ভেতরে খুব কাছে থেকে তাকান: এটা যদি টু ওয়ে মিরর হয় তাহলে আয়নার কাছে চোখ নিয়ে তাকালে আয়নার অন্য সাইড দেখা যাবে। আপনার মুখ আয়নাতে চেপে ধরুন এবং হাত দিয়ে মুখের সাইডে এমনভাবে ব্লক করুন যাতে কোনো আলো আয়নায় না পড়ে। এটা টু ওয়ে মিরর হলে আয়নার অপর পাশে কী আছে আপনি তা দেখতে পারবেন।
লাইট ব্যবহার করুন: কোনো ফ্লাশ লাইট বা সেলফোনের লাইট বা টর্চলাইটের আলো ফেলুন আয়নার ওপর। আয়নার খুব কাছে থেকে আলোটি ফেলুন। সম্ভব হলে ঘরের অন্য লাইট বন্ধ করে দিন, শুধু আপনার হাতের ওই আলোটি ছাড়া। এটা টু ওয়ে মিরর হলে, অন্য পাশে কী আছে যা দেখা যাবে।
নখ দিয়ে পরীক্ষা করুন: টু ওয়ে মিরর পরীক্ষা করার সবচেয়ে দুর্বল পদ্ধতি হলো নখ দিয়ে পরীক্ষা করা। এর ফলাফল নিখুঁত নাও হতে পারে। তবে এই পদ্ধতিও জেনে রাখা ভালো।
ব্যবহার করুন সেলফোন: সিকিউরিটি ক্যামেরা বা গোপন ক্যামেরা থেকে এক ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি আসে যেটা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়। যদি কোনো জায়গায় বা রুমে দেখেন আপনার মোবাইল ফোন সার্ভিস দিচ্ছে না এবং আপনার নজরে কোনো ক্যামেরাও পড়ছে না, তাহলে মনে করবেন সেখানে কাছাকাছি কোথাও গোপন ক্যামেরা আছে।
এতক্ষণ তো জানলেন কিভাবে গোপন ক্যামেরা শনাক্ত করা যায় এবার জেনে নিন যদি ক্যামেরা পেয়ে যান তখন কি করবেন....
গোপন ক্যামেরা বিভিন্ন রূপ ও আকারের হতে পারে। এর অবস্থান জানতে পারলে যা করবেন—
১.প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য লুকানো ক্যামেরার একটি ছবি তুলে রাখুন।
২.সম্ভব হলে ডিভাইসটি ঢেকে রাখতে একটি তোয়ালে বা কাপড় ব্যবহার করুন।
৩.ডিভাইসটি ঢেকে দিতে না পারলে নিজেকে এবং আপনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র ক্যামেরার আওতার বাইরে নিয়ে যান।
৪. স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ অনুসরণ করুন। এ ছাড়াও ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানানোর সুযোগ তো আছেই।