অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি দিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্যসহ ৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০১:৩৭ এএম

অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি দিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্যসহ ৭ জন

চারজনের শরীরে নিজের কিডনি ও কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করিয়ে ‘অমর’ হওয়া সারাহ ইসলামের মতো অঙ্গদানে এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদসহ সাতজন।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে সারাহ ইসলামের অঙ্গ অন্য চারজন রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এই প্রতিশ্রুতি দেন।

অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া অন্যান্যরা হলেন- বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলালসহ ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাদের অঙ্গীকারনামা ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহানসহ অনেকেই মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন। অন্য দুইজনের নাম জানা যায়নি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারাহ ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। আশা করি, তার পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন।

সারাহর মা শবনম সুলতানা বলেন, আমি মনে করি না, সারাহ মারা গেছে। সারাহ বেঁচে আছে অসংখ্য মানুষের মধ্যে। আমি আজকের দিনের অনুভূতি বোঝাতে পারব না।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশের ইতিহাসে সারাহ ইসলামই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গদান করে চারজন মানুষের জীবনের আশা জাগিয়ে গেলেন।”

তিনি বলেন, “সারাহ দেখিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়। মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়। আমার কাছে সারাহ ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। নশ্বর দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপর এক প্রাণের নাম হলো সারাহ ইসলাম। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এই নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে। মানবতার জগতে আপনি আমাদের কাছে এক অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।”

অনুষ্ঠান শেষে বিএসএমএমইউর প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নামে সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের উদ্বোধন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সারাহ ইসলাম ব্রেন ডেথ হওয়ার পরপরই তাঁর দুই কিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্লান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে তার দুটি কিডনি বের করেন আনেন। একটি কিডনি অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলভার প্রতিস্থাপন করেন।

সারা ইসলামের অপর কিডনিটি ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এছাড়াও সারাহ ইসলামের দুটি কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় শিক্ষিকা ফেরদৌস আক্তার (৫৬) ও মোহাম্মদ সুজনের (২৩) দুজনের চোখে।

বাংলাদেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ১০ মাস বয়সে টিউমার স্কেলেলিস রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগ নিয়ে তিনি অগ্রণী গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব ডেভলভমেন্ট আন্ট্রনেটিভে (ইউডা) ফাইন আর্টসে ভর্তি হন। সাহারা ফাইন আর্টসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৯ জানুয়ারি সকাল ৮টায় বিএসএমএমইউ’র কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রয়াত সাহারার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তাকে পারবারিকভাবে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

Link copied!