অক্টোবরে সফট লঞ্চিংয়ের পরিকল্পনা

দুইশো বছর টিকবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল

এম মনিরুল আলম

জুলাই ২৩, ২০২৩, ০৫:৩৪ পিএম

দুইশো বছর টিকবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

কমপক্ষে দুইশত বছরের টিকে থাকবে- এমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জতিক বিমানবন্দরের প্রযুক্তিনির্ভর সম্প্রসারিত টার্মিনাল যার নামকরণ করা হয়েছে ‘থার্ড টার্মিনাল‍‍’।

এ তথ্য জানালেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আওতায় নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম। 

আগামী অক্টোবর মাসে এ টার্মিনালের সফট লঞ্চিং বা আংশিক উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে নির্মাণকাজ শেষে এ ধরনের উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করার জন্য কমিশনিং ও টেস্টিং সম্পন্ন করতে করতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এরপরই যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের কার্যক্রম শুরু হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবিকাশের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগামী দিনগুলোতে নিরাপদ ও প্রযুক্তিনির্ভর বিমান ভ্রমণের বর্ধিত চাহিদা পূরণ এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

বর্তমানে দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরটির দুই টার্মিনালে অভ্যন্তরীণ ও বহির্গামী যাত্রী মিলিয়ে মোট ধারণক্ষমতা রয়েছে বছরে ৮ মিলিয়ন বা দৈনিক ২১ হাজার ৯১৮ জন।

থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ হলে এ ক্ষমতা দাঁড়াবে ২০ মিলিয়ন বা দৈনিক ৫৪ হাজার ৭৯৫ জন। অর্থাৎ এককভাবে থার্ড টার্মিনালের ক্ষমতা হচ্ছে ১২ মিলিয়ন বা ৩২ হাজার ৮৭৬ যাত্রী।

এছাড়াও এ টার্মিনালের কার্গো সেকশনের মাধ্যমে বছরে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন রপ্তানিযোগ্য মালামাল হ্যান্ডলিং বা ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বিমানবন্দরটিতে এ ক্ষমতা রয়েছে ২ লাখ ৫৬০ মেট্রিক টন। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ হলে রপ্তানি কার্গো ব্যবস্থাপনার মোট ক্ষমতা দাঁড়াবে ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৫০১ মেট্রিক টন। 

একইসাথে নতুন করে আমদানি কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি তৈরি হচ্ছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন। বিদ্যমান ক্ষমতা মাত্র ৮৪ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন। মোট আমদানি কার্গো ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা দাঁড়াবে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন।

টার্মিনাল এরিয়া বর্তমানে আছে ১ লাখ বর্গমিটার। থার্ড টার্মিনালে যোগ হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া এ টার্মিনালের ৭৬ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী অক্টোবরে এ টার্মিনালের একটি অংশ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

জাপানের মিতশুবিশি ও ফুজিতা কর্পোরেশন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সি অ্যান্ড টি কর্পোরেশন এ টার্মিনাল নির্মাণকাজের ঠিকাদার।

বর্তমানে এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা যার বেশিরভাগ স্বল্পসুদে ঋণ হিসেবে পাওয়া গেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি বা জাইকা থেকে। এ ঋণ সহায়তার পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো। বাকি অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায় শ্রমিক, কর্মচারী, নিরাপত্তা প্রহরী, প্রকৌশলী ও কারিগর মিলিয়ে এ প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় ১২ হাজার কর্মী।

এ টার্মিনালের প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী দর্শকের নজর কেড়ে নেয় সহজেই। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমান বন্দরের প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের নকশার আদলে এ টার্মিনালেরও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের অংশবিশেষ নির্মাণ করা হয়েছে।

প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের সাথে যুক্ত হয়েছে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। এপ্রোন এরিয়া বা বিমান এসে ল্যান্ডিং করার স্থান থেকে এসব ব্রিজ যাত্রীদের অনবোর্ড ও অফবোর্ড সহজ করবে। এর বাইরে এ টার্মিনালে আরও ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে।  

নতুন এই টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য আরও যেসব সুবিধা রাখা হয়েছে...

বহির্গমনের জন্য ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এর মধ্যে থাকবে ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার।

দশটি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ১২৮টি।

আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে।

টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট।

তৃতীয় টার্মিনালের সাথে নির্মাণ করা হবে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন। এতে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভবনের অভ্যন্তরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপি স্পেস রাখা হবে।

ভবনের সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ থাকবে। থাকবে ১২টি মুভিং ওয়াকওয়ে, ৩৫টি এসকেলেটর ও ৪৩টি ইলেভেটর।

থাকবে আন্তর্জাতিক মানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।

এদিকে বোয়িং বাংলাদেশে বিমান ভ্রমণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং সক্ষমতাবিষয়ক তাদের কমার্শিয়াল মার্কেট আউটলুক (সিএমও) গত মে মাসে প্রকাশ করেছে। এটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিমানের চাহিদাবিষয়ক একটি বার্ষিক পূর্বাভাস।

সিএমও থেকে প্রক্ষেপণ করা হয় যে বাংলাদেশে বিমান ভ্রমণের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বোয়িংয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি ৫ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে, যা বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড়ের  দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে বিমান ভ্রমণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে প্রায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।

সিএমও প্রতিবেদন বলছে গত বছর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় বাংলাদেশে বিমানের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বছরে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে আঞ্চলিক ট্রাফিক বিবেচনায় আগামী ১৯ বছরে বাংলাদেশে বিমান দ্বিগুণ হবে জানানো হচ্ছে।

বোয়িং-এর ডেভিড শাল্ট বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দারুণ সুযোগ দেখতে পাচ্ছি, যেখানে বৃদ্ধির জন্য ভবিষ্যতে বিমান বহরের ৮০ শতাংশের বেশি প্রয়োজন হবে। আর বাকি ২০ শতাংশ ব্যবহৃত হবে পুরোনো অকার্যকর বিমান প্রতিস্থাপনের জন্য।

সিএমওর পূর্বাভাস অনুযায়ী, যাত্রী ভ্রমণ এবং এয়ার কার্গোর জোরালো চাহিদা মেটাতে দক্ষিণ এশিয়ার বাহক বা ক্যারিয়ারদের আগামী ২০ বছরে ২৩০০টির বেশি নতুন বাণিজ্যিক বিমানের প্রয়োজন হবে।

বোয়িং জানায়, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ইন-সার্ভিস বিমানের সংখ্যা ৭০০টি।

Link copied!