লাখ টাকার এসি মিলছে মাত্র ১৫ হাজারে

গোলাম রাব্বানী

এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৩:১৯ পিএম

লাখ টাকার এসি মিলছে মাত্র ১৫ হাজারে

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

রাজধানীর চিটাগাং রোড থেকে বারিধারা জে ব্লকে এসেছে ব্যবসায়ী সাব্বির আহমেদ। অপেক্ষাকৃত কম দামে ব্যবহৃত এয়ার কন্ডিশনার (এসি) কিনতেই এতদূর আসা। অনেক দোকান ঘুরে দরদাম শেষে অবশেষে ২৮ হাজার টাকা দামের হাইসেন্স ব্র্যান্ডের এসি কেনেন তিনি। অথচ এই একই এসি দরদাম করেও অবশেষে কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন সাগর। এসি ইন্সটল করা ও আনুষঙ্গিক খরচ এড়াতে এই সিদ্ধান্ত তার।

তীব্র তাপদাহের ফলে রাজধানীসহ সারাদেশেই বেড়েছে এসি-ফ্যানসহ বিভিন্ন শীতল করা পণ্যের চাহিদা। তবে আকস্মিক গরমের ফলে অনেকেই নতুন এসি ক্রয় করার বাজেট নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকেই আবার অফিস রুম ও অন্যান্য স্থানে আরেকটি এসি কেনার পরিকল্পনা করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেকেন্ড হ্যান্ড এসির দিকে ঝুঁকছে তারা।

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

যে ব্রান্ডের এসি পাওয়া যাচ্ছে
হাইসেন্স ব্রান্ডের দুই টন এসির বর্তমান বাজারমূল্য ৬০-৯০ হাজার টাকা। সেই এসি বারিধারা সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে। শুধু হাইসেন্স নয়, জেনারেল, এলজি, আমেরিকান এয়ার, গ্রি, স্যামসাং, ট্রান্সটেকসহ সব নামিদামি ব্রান্ডের সেকেন্ড হ্যান্ড এসি আছে বারিধারা জে ব্লকের এই সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে। এছাড়া দেশে সংযোজিত ওয়ালটন, মিনিস্টার এসির পাশাপাশি অখ্যাত চিনা ব্রান্ডের এসিও পাওয়া যাবে তাদের কাছে। সেকেন্ড হ্যান্ড এই এসি দরদাম করে কিনতে হবে। তবে গত বছরের তুলনায় সেকেন্ড হ্যান্ড এসির দামও বেড়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই জানিয়েছে।

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সেকেন্ড হ্যান্ড এসির দাম কেমন
পণ্যের গুণগত মান ও বয়সের উপড় ভিত্তি করে এসির দাম নির্ধারণ করা হয় বলে জানায় বারিধারার কুলিং স্টেশনের সেলস পার্সন জাকিরুল হাসান। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে যেমন ১৬ হাজার টাকা মূল্যের এসি রয়েছে তেমনি ৩০-৪০ হাজার টাকা দামের এসিও রয়েছে। নামিদামি ব্র্যান্ডের বেশি পুরনো এসির পাশাপাশি চিনা ব্র্যান্ড ও আলাদা পার্টস লাগানো এসির দাম কম। তবে অনেক সময় দেখা যায় ইনটেক অবস্থায় এসি আনা হয় সে সময় সেগুলোর দামও সেভাবে নির্ধারিত হয়।”

বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে মানভেদে ১ টনের এসির দাম ১৫-২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেড় টনের এসি ২০-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই টনের এসি ২৪-৩২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাসা-অফিসের জন্য এই ধরনের এসি বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে ৩-৫ টনের এসিও পাওয়া যাচ্ছে এই সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে। সেগুলো বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট কিংবা বড় অফিস, শোরুমের জন্য কেনা হচ্ছে।

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

কম দামি এসিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই মূলত জেনারেল এসি। ৬-১০ বছর পুরনো হওয়ায় এসব এসির দাম এতটা কমে পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে যেগুলোন মূল্য ছিল ৯০ হাজার টাকা। তবে পুরনো হলেও সচল আছে এসব এসি। পুরনো প্রযুক্তির ফলে এই এসিতে বিদ্যুৎ বিল হয়।

এসি সংগ্রহ করতে অ্যাম্বাসিতেও
এদিকে এই এসি বিভিন্ন অফিস বদল, অ্যাম্বাসি, রেস্টুরেনট থেকে সংগ্রহ করে থাকে তারা। এছাড়া অনেকেই বাসা বাড়ির এসিও বিক্রি করে দেয়। সব মিলিয়ে সচল এসি কিনে থাকে। তবে অচল এসির জন্যও রয়েছে ব্যবস্থা। অচল ও নষ্ট এসির দামও ৬-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

তেমনই অচল ও নষ্ট এসির কেনাবেচা করেন মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি জানান, নষ্ট এসিরও কিছু ফেলনা নাই। নষ্ট এসির বিভিন্ন পার্টস আলাদা আলাদা বিক্রি করা যায়। আর কম্প্রেসার যদি ভাল থাকে তাহলে ৪-৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। নষ্ট কম্প্রেসারের দামও দেড়-দুই হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পার্টস, ফ্যান এগুলোর দামও বেশ ভালো।

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

গরম পড়ায় অনেকেই পুরনো ও নষ্ট এসি বিক্রি করছে। তাপদাহের কারণে অনেকে সার্ভিসিং না করিয়ে এসি হঠাৎ চালু করায় নষ্ট বেশি হচ্ছে। ঠিক এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০টি নষ্ট এসি কিনতে পারছেন বলেও জানান তিনি।

নন ইনভার্টার ও বিদ্যুৎ বিলে পিছু হটছেন অনেকে
বারিধারার সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কের্টের এসিগুলো প্রায় সবই নন ইনভার্টার প্রযুক্তির, অর্থাৎ আগের প্রযুক্তির। সেইসাথে পুরনো এসিগুলো বিদ্যুৎ খরচও বেশি করছে। আবার যুক্ত হচ্ছে বাসায় এসি স্থাপন, হোস পাইপ, গ্যাস পাইপ ও কারিগরির পারিশ্রমিকসহ নানান খরচ। ফলে কিনতে এসেও অনেকে পিছু হঠছেন।

বর্তমান বাজারে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসির ব্যবহার বেড়েছে। দাম বেশি হলেও বিদ্যুৎ কম খরচ করার পাশাপাশি দ্রুত ঠান্ডা করা ও বিভিন্ন ফিচার রয়েছে। ফলে ইনভার্টার প্রযুক্তির চাহিদা বেশি এসির মার্কেটে। তবে নন ইনভার্টার এসিও বিক্রি হচ্ছে।

তবে সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে নন ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি বেশি। মূলত ২-৩ বছর আগেও নন ইনভার্টার এসির ব্যবহার বেশি ছিল। তাই দুই বা ততোধিক পুরনো হওয়ায় বিক্রি করা এসি সব নন ইনভার্টার। ফলে ক্রেতাদের এই সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে বিদ্যুৎ বিলের দিকটাও বিবেচনা করা লাগছে।

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

এদিকে নতুন এসি ক্রয় করলে শোরুম কিংবা কোম্পানি থেকে স্থাপনের অ্যাঙ্গেল, পাইপ ও ফ্রি ইনস্টলের পাশাপাশি ৫-১০ বছরের কম্প্রেসারের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে একাধিক ফ্রি সার্ভিসিং দেয়া হয়। কিন্তু সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। সেকেন্ড হ্যান্ড এসি কিনলে মাত্র ১ মাসের কম্প্রেসার ওয়ারেন্টি দেয়া হচ্ছে।  এদিকে আলাদা পাইপ, অ্যাঙ্গেল ও শ্রমিক খরচেও বাড়তি যোগ হবে ৫-৮ হাজার টাকা। এজন্য অনেকেই দরদাম করেও শেষ মুহূর্তে এসি কিনছেন না।

অফিসের জন্য এসি কিনতে আসা সাগর খাকি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “অনেক দোকান ঘুরে একটি এসি পছন্দ হয়েছে। তবে দরদামের পর দেখি বাড়তি আরও ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হবে। ফলে মোট খরচ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা পড়ে যাবে। এই দামে সেকেন্ড হ্যান্ড এসি কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।”

মদিনা এন্টারপ্রাইজের কর্ণাধর মো. সাইফুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে কিনি সেখান থেকে কিছু লাভ রেখেই বিক্রি করি। সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যের ওয়ারেন্টি দেয়াটা সম্ভব হয় না। তবে ক্রেতাদের যদি কোনো পার্টস নষ্ট হয় সেগুলো আমরা এখান থেকে সরবারহ করার চেষ্টা করি।”

যেভাবে যাবেন সেকেন্ড হ্যান্ড এসির মার্কেটে
রাজধানীর যে কোনো প্রান্ত থেকে বারিধারায় নামতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসির রাস্তার উল্টোদিকে ভাটারা থানা ও বারিধারা জে ব্লক অবস্থিত। বারিধারা জে ব্লকে গিয়ে বললেই দেখিয়ে দেবে পুরনো পণ্য কেনাবেচার মার্কেট। প্রকৃত অর্থে এখানে একাধিক মার্কেট রয়েছে যেগুলোতে আসবাবপত্র, স্যানিটারি পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন বিলাসবহুল ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য পাওয়া যায়। এই সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটগুলোতে ঢু মারলেই দেখা যাবে একাধিক পুরাতন এসি ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান। প্রকৃতপক্ষে এসির কন্ডিশন কেমন আছে  তা দোকানদারের ওপর ভরসা করেই ক্রয় করতে হচ্ছে। তবে এসি সচল ও সব ফাংশন ঠিক করেই তারা পণ্য সরবরাহ করছে।

Link copied!