পদ্মা সেতু: চিরচেনা রুপ হারিয়ে ফেলল ফেরিঘাট, যাত্রীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৭, ২০২২, ১২:৪২ এএম

পদ্মা সেতু: চিরচেনা রুপ হারিয়ে ফেলল ফেরিঘাট, যাত্রীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এক সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাট সকাল-সন্ধ্যা ২৪ ঘণ্টাই জনাকীর্ণ থাকত। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতো যানবাহনের সারি। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই চিরচেনা রুপ সহসাই বদলে গেল। দক্ষিণের বাসিন্দাদের অনেকে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। তবে যানবাহনের উচ্চ ভাড়ার কারণে অনেকের হাসিমুখ চওড়া হতে পারেনি। তারা বলছেন, লঞ্চ বা ফেরিতেই খুশি ছিলেন তারা। লঞ্চের দুইশ টাকার ভাড়া এখন গুনতে হচ্ছে এক হাজারেরও উপরে!

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বার মু‌ন্সীগ‌ঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট। এই ঘাট দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা লঞ্চ, স্পিডবোট অথবা ফেরিতে পাড়ি দেন উত্তাল পদ্মা নদী। এতোদিন রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণের জেলাগুলোর স্থলপথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় পদ্মা সেতু চালুর আগে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের ভোগান্তির কোনো সীমা ছিল না।

শনিবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মুহূর্তেই অবসান হয়েছে দীর্ঘ সেই ভোগান্তি আর যানজটের। প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন দেশের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ এই সেতুটি। রবিবার সকাল থেকে সর্বসাধারণের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে শিমুলিয়া ঘাটেও।

সরেজমিনে বাংলা বাজার ঘাটে ঘুরে দেখা যায়, ঘণ্টার ঘণ্টা লঞ্চগুলো অলস বসে আছে। হুইসেল বাজালেও ঘাটে ভিড়ছে না বা দূর গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো লঞ্চ বা ফেরি।

এ বিষয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, যেখানে ঘাট থেকে ঘণ্টায় লঞ্চ বা ফেরি ছাড়ে দুই বা তিনটা সেখানে রবিবার সকাল থেকে বিকাল গড়িয়ে গেলেও ঘাট থেকে ফেরি বা লঞ্চ ছেড়ে গেছে মাত্র ৫টি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, "সকাল থেকেই লঞ্চ-স্পিডবোট যথানিয়মে চলাচল করছে। তবে যাত্রীসংখ্যা অনেক কম। সকাল থেকে ১২টি স্পিডবোট শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি ও বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।"

পদ্মা সেতুতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন


লঞ্চ বা ফেরি যাত্রিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় তারা বাসে সেতু দিয়ে পারপার হচ্ছেন না। অনেকের বাড়ি আবার ঘাটের পাশে হওয়ায় তারা ফেরিতে যাচ্ছেন। কেউ কেউ তাড়া থাকায় স্পিটবোডে যাচ্ছেন। কেউ আবার বলছেন, আজ সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করায় অনেক ভীড়। তাই স্পিটবোডেই বাড়ি যাচ্ছেন।
দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের অনেকে জানান, সেতু দিয়ে গেলে আমাদের সময় বাঁচবে। কিন্তু আমাদের পকেটের দিকে তো তাকাতে হবে। লঞ্চ ভাড়া কম, লঞ্চে যাতায়াত খরচ খুবই সীমিত। গাড়ি দিয়ে গেলে যাতায়াত খরচ ডাবলের বেশি পড়ে যায়। লঞ্চে ২৫০টাকায় বাড়ি যাই। কিন্তু গাড়ি দিয়ে গেলে ৭০০ টাকার বেশি খরচ পড়বে। আর এই বেশি টাকা খরচ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর তাই আমাদের আপাতত লঞ্চই ভরসা।

মাদারীপুরের বাসিন্দা আলম শেখ। লঞ্চের এই যাত্রী বললেন, লঞ্চ আর গাড়ির ভাড়া সমান থাকলে আমরা গাড়ি দিয়েই যাইতাম। আজ না হোক কাল যখন গাড়ির ভাড়া কমবে তখন যাবো।

কামাল শাহরিয়ার নামের গোপালগঞ্জের এক লঞ্চযাত্রী বললেন, গাড়ির ভাড়া হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আগে গোপালগঞ্জ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া ছিলো। এখন ৫০০ টাকা। গোপালগঞ্জ থেকে মাওয়া, বা টেকের হাট যেখানেই নেমে যান ভাড়া ৫০০ টাকাই। অথচ গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা লঞ্চে যেতে ৩০০ লাগে। তাই লঞ্চেই যাচ্ছি।

এদিকে মাওয়া ঘাটে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকা অটোরিকশাচালক নিজাম বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় আজ কোনো যাত্রী নেই। ভাবছি এখন থেকে অন্য কোনো রুটে রিকশা চালাতে হবে।

সরেজমিনে দেখা গেল, ঘাট এলাকায় নিজেদের দোকান খুলে বসে আছেন অনেকেই। কিন্তু নেই কোনো খরিদ্দার। লঞ্চঘাটে ভিড়লেই কে কার আগে খরিদ্দার বাগাতে পারে, সেই প্রতিযোগিতা চলতো। আজ তার ছিটেফোটাও নেই। চারদিকে শূণ্যতা।

অলস বসে থাকা রুবেল নামের এক রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার বলেন, আজ জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে ঘাট। একদিনেই নিস্তব্ধতা। তবে, সন্ধ্যার পর হয়তো টুরিস্টের ভিড় বাড়তে পারে।

এদিকে সকাল থেকেই অন্যান্য গাড়ির চেয়ে বেশি ছিল মোটরসাইকেল। অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ঘুরবার জন্য।

ঢাকা থেকে এসেছেন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা রুহুল ইসলাম। তিনি শরীয়তপুরে যাচ্ছেন ব্যক্তিগত কাজে। কাজ শেষে দু-একদিন পর আবার ঢাকা ফিরবেন। তিনি বললেন, অল্প সময়ে বাড়ি ফিরতে পারবো, এটি বিরাট এক পাওয়া। বিরাট এক আনন্দ।

Link copied!