ডিসেম্বর ১৯, ২০২২, ০৭:৩৬ পিএম
‘আমরা এ ধরণের ম্যাচ আর কখনও দেখবো না।’- বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে সেরা ফাইনাল ম্যাচ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ ধরণের মন্তব্য করেন ইংল্যান্ড দলের রক্ষণভাগের সাবেক ফুটবলার রিও ফার্দিনান্দ।
রবিবার কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনা ফাইনাল ম্যাচে সব কিছু ছিল। বলের দখল নিয়ে সুপারস্টার লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পের মধ্যকার তীব্র লড়াই, নাটকীয়তা, সাসপেন্স, ক্লাইমেক্স- পেনাল্টিসহ সব কিছু ছিল ফাইনাল ম্যাচে।
বিবিসি ওয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ফার্দিনান্দ বলেন, ‘ম্যাচে যা ঘটেছিল আমি তা কখনও কল্পনাও করতে পারি না। আপনি দেখেন যেখানে সবচেয়ে বড় দুটি দল পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চালাচ্ছে এবং কেউ পিছু হঠতে নারাজ। বড় দুই দলের দুই সুপারস্টারও দলকে জেতাতে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন-এক কথায়-দুর্দান্ত।’
ইংল্যান্ড দলের সাবেক স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়ারার বলেন, “আমাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। এটি অবিশ্বাস্য এক ফাইনাল ম্যাচ। আমি আগে এ ধরণের ম্যাচ কখনও দেখিনি। আমি মনে করি এ ধরনের ম্যাচ আমি আর দেখতে পারবো না। এটি এক বিস্ময়কর ম্যাচ।”
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ লিওনেল স্কালোনি জানান, তিনি ‘নীরব’ থাকতে চেয়েছিলেন তবে জয়ের উচ্ছ্বাস আর লুকাতে পারেননি।
স্কালোনি বলেন, “ম্যাচটি ছিল পুরোপুরি বিরক্তিকর। আমি জানি ম্যাচটি আমাদের দখলে ছিল এবং আমাদের প্রথম ৯০ মিনিটের মধ্যেই জয় পাওয়া উচিত ছিল। জয়ের ব্যাপারে আমার সর্বোচ্চ আস্থা ছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা ওই আস্থাটা অর্জন করতে পেরেছি।”
খেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে গেলে দেখা যাবে-২৩ মিনিটের সময় ফ্রান্সের বিপেক্ষে পাওয়া পেনাল্টিতে লিওনেল মেসি গোল করে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যান।
প্রথমার্ধের ৩৬ মিনিটের সময় অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার গোলে ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় লিওনেল মেসি বাহিনী।
৮০ তম মিনিটের সময় এমবাপ্পে পেনাল্টি পেলে তার দেওয়া গোলে ব্যবধান কমে আসে। এর মাত্র এক মিনিটের মাথায় এমবাপ্পের দেওয়া গোলে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সমতায় ফেরে ফ্রান্স।
১০৮তম মিনিটের সময় মেসির গোলে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এর ১০ মিনিট পর ১১৮তম মিনিটে গোল দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন ফরাসি লিজেন্ড এমবাপ্পে। এরপরই পেনাল্টি গোলে খেলার ভাগ্য নির্ধারণ পর্ব শুরু হয়।
গোল্ডেন বুট পাওয়ার দৌড়ে থাকায় কাতার বিশ্বকাপে এবার কোটি কোটি দর্শকের নজর ছিল আর্জেন্টিনার ফুটবল লিজেন্ড লিওেনেল মেসি ও ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পের দিকে। তারা কিভাবে দলকে শিরোপা জয়ে সহায়তা করে তার দিকেও নজর ছিল দর্শকদের।
তবে ফুটবল লিজেন্ড এমবাপ্পে খেলার প্রথমার্ধে তেমন নজর কাড়তে পারেন নি। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার দখলে ছিল পুরো মাঠ। খেলা শুরুর চার মিনিটের মধ্যেই আর্জেন্টিনার অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের জোরালো শট প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের রক্ষণভাগকে বিপর্যস্ত করে ফেলে।
প্রথমার্ধের ২৩তম মিনিটে দলের জন্য আশির্বাদ বয়ে আনেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি। ফ্রান্সের ডি বক্সে তাকে ফেলে দিলে পেনাল্টি পান এবং এর মাধ্যমে পাওয়া গোলে দলকে ১-০ তে এগিয়ে নিয়ে যান। এর ১৩ মিনিট পরেই ডি মারিয়ার গোলে ২-০ তে এগিয়ে যায় মেসিরা।
অন্যদিকে, ফরাসিরা ছিল চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায়। খেলা শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটে আর্জেন্টিনার ডি বক্সে ফরাসি সুপারস্টার এমবাপ্পেকে দেখতে পাওয়া যায়নি। অন্য খেলোয়াড়দের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া বা নিজ দলের খেলেয়াড়দের বল যোগানো কোনোটাতেই তার ভূমিকা চোখে পড়েনি।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগেই বিরতি চলার সময় ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থাকায় কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ কাভার করতে আসা বিদেশি সাংবাদিকরা তাদের ম্যাচ রিপোর্ট অনেকটা চূড়ান্ত করে ফেলে। বিন্তু তারা জানতো না-আসল নাটকটি তখনও মঞ্চস্থ হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ধাক্কা খাওয়া ফ্রান্স সুবিধা করতে পারেনি। তবেখেলার ৬৭ মিনিটের সময় এমবাপ্পেরা তাদের চিরাচরিত খেলার ছন্দে ফিরে আসেন। এসময়ে তারা প্রথম বারের মতো আর্জেন্টিনার ডিফেন্স ভেঙ্গে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের কাছে পৌছে গেলেও লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়।
ম্যাচের ৮০ মিনিটে কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু পায় লেস ব্লুজরা। কোলো মুয়ানিকে ফাউল করেন আকাশি-সাদার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে বল জালে পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সম্যান কিলিয়ান এমবাপ্পে। এক মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল করেন ২৩ বছরের তরুণ এমবাপ্পে। মার্কাস থুরামের পাস ধরে জোরের ওপর শটে জালে পাঠিয়ে দেন তিনি।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ওই ২-২ গোলের সমতায় শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। সেখানেও আর্জেন্টিনার বাজিমাত। বদলি নেমে লাওতারো মার্টিনেজ একের পর গোল মিস করছিলেন। এর মধ্যে ত্রাতা হয়ে আসেন লিওনেল মেসি। তিনি ১০৮ মিনিটে বক্সের মুখ থেকে নিজের নার্ভ ধরে রেখে দারুণ এক গোল করে দলকে ৩-২ গোলে এগিয়ে নেন।
লেখক: বিবিসি’র ক্রীড়া সাংবাদিক। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি’তে প্রকাশিত মূল ইংরেজি প্রতিবেদনটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন মিজানুর রহমান খান।