সংসদ নেতা, উপ-নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং চীফ হুইপের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শপথ নিয়ে ফেলেছেন নতুন সংসদ সদস্যরা। বাকি আছে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
হতে পারে চলমান মন্ত্রিসভায় রদবদল, নতুন মুখের আগমন আর বর্তমান সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাদ পড়তে যাচ্ছেন বলে আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতারা জানিয়েছেন, কিছু প্রবীণ নেতাও মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়বেন তাদের অদক্ষতা ও বয়সের কারণে। এছাড়া প্রথমবার নির্বাচিত কিছু সংসদ সদস্য অন্তর্ভূক্ত হবেন যেখানে সাবেক আমলাদের আসার সম্ভাবনা বেশি।
আগে সংসদ সদস্য ছিলেন এবারও নির্বাচিত হয়েছেন এমন কিছু নতুন নেতাও থাকবেন মন্ত্রিসভায়। সম্ভাবনা রয়েছে টেকনোক্রেট কোটায় নিয়োগেরও।
তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নিবেন। তাই নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এবারের মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ গঠন করার ব্যাপারে এখতিয়ার হচ্ছে সংসদ নেতার। উনি কীভাবে তার সরকার গঠন করবেন, মন্ত্রিপরিষদ সাজাবেন, সরকার পরিচালনার টিম তিনি কীভাবে সাজাবেন সেটা কিন্তু তার এখতিয়ার। এ সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
নতুন মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণে যারা যারা ডাক পাবেন তারাই সেখানে শপথ নিবেন। এখন কেবল ফোনের অপেক্ষায় আছেন।
যেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পরিবর্তন হতে পারে সেগুলো হলো- স্বাস্থ্য, শিল্প, বাণিজ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ, স্থানীয় সরকার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, ভূমি, গণপূর্ত, অর্থ, পরিকল্পনা, তথ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঢাকা-১৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহাঙ্গীর কবির নানক। ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত পেতে পারেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন জাহিদ মালেক।
কুমিল্লা-৮ আসন থেকে নির্বাচিত আবু জাফর মোহাম্মদ শামীমও একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বয়সজনিত কারণে দায়িত্ব হারাতে পারেন। এ দায়িত্বে দেখা যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীকে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন। অন্যদিকে খুলনা থেকে একজন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য শ্রম মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও জানান তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পেতে পারেন বলে ধারণা করছেন দলের একাধিক প্রবীণ নেতা।
আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত সাবেক তিন আমলা, সাবেক পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং সাজ্জাদ হোসেনকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। এদের মধ্য থেকে একাধিকজন পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন বলে দলীয় মহলে ভাবা হচ্ছে।
একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন আবদুস সবুর। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আসবেন সিমিন হোসেন রিমি অথবা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এছাড়া নির্বাচিত তারকা ও তরুণদের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
এছাড়া বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মণির মন্ত্রণালয় হারানোর গুঞ্জন থাকলেও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার জায়গায় থাকবেন বলে জানা গেছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে পূর্ণমন্ত্রী করা হতে পারে। এছাড়া উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে পদোন্নতি দেয়া হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আসারও গুঞ্জন উঠেছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, এমনটাই জানা গেছে দলীয় সূত্রে। এদিকে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পদোন্নতি হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া, টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
আওয়ামী লীগের শরিকদের মধ্যে দুই দলের দুইজন নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে অন্তত একজনের সম্ভাবনা রয়েছে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভার মধ্যে অন্তত ১৫ জন বাদ পড়তে পারেন। বয়স, নানা বিতর্ক ও অদক্ষতার দায়ে এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাদ যেতে পারেন। এর মধ্যে টানা তিন মেয়াদে মন্ত্রিসভায় আছেন, এমন নেতাও বাদ পড়তে পারেন। এর বাইরে মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্য নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন এবং তিনজন দলের মনোনয়নই পাননি।
এবার যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন- তাঁরা হলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
এর আগে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, যিনি সংসদ সদস্য হবেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। সরকারপ্রধানের সুপারিশেই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (৭ জানুয়ারি) সারা দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে নির্বাচন হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে নির্বাচন স্থগিত হয়। এছাড়াও ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়।
এতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ২২২টি আসনে বিজয়ী হয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। অন্যান্য আসনের মধ্যে স্বতন্ত্র ৬২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, শরিকজোট ২টি ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি আসন লাভ করে।