চিন্ময় দাস গ্রেপ্তার: পদক্ষেপ নিতে ভারতের প্রতি ইসকনের আর্জি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

চিন্ময় দাস গ্রেপ্তার: পদক্ষেপ নিতে ভারতের প্রতি ইসকনের আর্জি

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃ্ষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গতকাল ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ভারতের প্রতি আর্জি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন।  

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে ভারতকে উদ্দেশ্য করে ইসকনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা উদ্বেগজনক রিপোর্ট পেয়েছি যে ইসকন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঢাকা পুলিশ আটক করেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসকনের সম্পর্ক আছে কিন্তু এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং নিন্দনীয়। তাই ইসকনকে সুরক্ষিত রাখতে ভারত সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা বলার জন্য এবং আমাদের এই আন্দোলন একটি শান্তিপ্রিয় ভক্তি আন্দোলন বলে বোঝানোর জন্য ভারতকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।”

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মুসলিমদের একটি অংশ ইসকনকে সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গী বলে আখ্যায়িত করেছিল। এর প্রেক্ষিতে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানিয়েছিল তারা।

বলা হয়, সেই সময়ই কট্টরপন্থী মুসলিমদের থেকে সামাজিক মাধ্যমে হুমকি পাওয়ার পরই আতঙ্কিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কাছে তারা নিরাপত্তা নিশ্চিতের আবেদন জানান।  

গ্রেপ্তার করা হল কেন?

সম্প্রতি ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) বাংলাদেশ থেকে বহিস্কৃত হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, পুলিশের একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। 

যারা আবেদন করেছে, তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি। 

আরও পড়ুন: সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাশ আটক 

এর আগে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করে। ওই সমাবেশের পরপরই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান, পরে বিএনপি থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কয়েক দিন এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।

এদিকে সোমবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেছেন, ‘চিন্ময় দাস আটক হয়েছেন বলে আমরা জানি। উনার নামে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, এ গ্রেপ্তারের ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁরা অনতিবিলম্বে চিন্ময় কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।

গতকাল সন্ধ্যায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করছে তার অনুসারীরা। ডিবি কার্যালয়েও যান ধর্মীয় নেতারা। তারা দ্রুত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি করেছেন।

Link copied!