নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন

অভিযোগ অস্বীকার করলেন বরগুনা-১ আসনের নৌকাপ্রার্থী শম্ভু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৫:৩০ পিএম

অভিযোগ অস্বীকার করলেন  বরগুনা-১ আসনের নৌকাপ্রার্থী শম্ভু

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শোকজ নোটিশের ৯১/ক ধারায় ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় নির্বাচন কমিশনে ডাকা হয়েছিল ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে। 

শুনানির আগে এক সাক্ষাৎকারে  বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, আমি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি। আমার সমর্থকরা করে থাকতে পারে। এখন ইসি ডেকেছে বলেই এসেছি।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ৯১/ ৬(গ) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থীকে অনধিক বিশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা অবধি জরিমানা এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। তবে বাতিল হয়নি প্রার্থিতা। 

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, নির্বাচন কমিশন যে কোনো ধারার সাজা পরিবর্তন করার এখতিয়ার রাখে। 

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক সমর্থকদের নিয়ে জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত অনুমোদিত সময়ের পূর্বে বিভিন্ন স্থানে ও সড়কে জনসভা, বর্ধিত সভা, পথসভা, সংবর্ধনা এবং মোটর শোভাযাত্রাসহ মিছিল করেন। 

ফলে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৬(খ) ও (ঘ), ৮(ক) এবং ১২ এর বিধান লঙ্ঘন করে উক্ত বিধিমালার বিধি ১৭ এবং The Representation of the People Order, 1972 এর Article 91B(2) এর বিধান অনুযায়ী ‍‍‘নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম‍‍’ সংঘটন করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি উক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে পৃথক চারটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন মাননীয় নির্বাচন প্রেরণ করেছে । 

নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম সংঘটনের দায়ে আপনার বিরুদ্ধে The Representation of the People Order, 1972 এর Article 91A এর Clause (6c) এর বিধান অনুযায়ী অর্থদন্ড আরোপ এবং প্রার্থিতা বাতিল করার বিষয়ে আগামী ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ বিকাল ৪,০০ ঘটিকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে (কক্ষ নং-৩১৪, নির্বাচন ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা) সশরীরে উপস্থিতির জন্য বলা হয়। 

শুনানি শেষে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বরগুনা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে নির্বাচন কমিশণ (ইসি)।

তিনি বলেন, ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জরিমানার টাকা তিনদিনের মধ্যে জমা দিতে হবে এবং সেটা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। পরবর্তীতে রিটার্নিং কর্মকর্তা তা ইসিকে অবহিত করবেন।

এর আগে রবিবার নির্বাচনি আচরণবিধি মানার প্রশ্নে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেয় ইসি। তার একদিন বাদে আওয়ামী লীগের বরগুনা -১ আসনের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে সংসদ সদস্যের ব্যাখ্যা তলব করেছ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। 

একাধিকবার নির্বাচনি আচরণ বিধি ভঙ্গে অভিযোগ বাহারের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না এবং শম্ভুকে জরিমানা বা কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না, এমন নোটিশের উপর যথাক্রমে এই দুই প্রার্থীর ব্যাখ্যা তলব করে কমিশন।

এর আগে বাহার নির্বাচনি অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশসহ ইসিতে প্রতিবেদন পাঠায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।

নির্বাচনী আচরণবিধির ধারা অনুযায়ী তিনবার শোকজে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রার্থিতা বাতিল উল্লেখ থাকলেও আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থীর ক্ষেত্রে শুধু মাত্র জরিমানা বিষয়ে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশনের শোকজের সিদ্ধান্ত অনেকটা কোর্টের মতো এখানে যেকোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে। নির্বাচন কমিশন বিবিধ এবং আর পি ও মেনে যেকোনো ধরণের সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার রাখে। আচরণবিধি বিবিধ এবং আর পি ও দুইটা মিলেই প্রার্থীদের ক্ষেত্রে একটা সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। 

আচরণবিধি ৯১ এর গ অনুযায়ী (৬ক) কমিশন দফা (৬) এর অধীন কোনো সুপারিশ প্রাপ্ত হইবার পর উহা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় আদেশ বা নির্দেশনা প্রদান করিতে পারিবো।

(৬খ) যেক্ষেত্রে দফা (৬ক) এর অধীন কোনো আদেশ বা নির্দেশ জারি করা হয়, সেইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে তাৎক্ষণিকভাবে উহা প্রতিপালন করিতে হইবে।

(৬গ) দফা (৬ক) এর অধীন কোনো আদেশ বা নির্দেশ জারি করা হইলে, কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে অনধিক এক লক্ষ টাকা, তবে অন্যূন বিশ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করিতে এবং, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করিতে পারিবে।]

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল (৭ ) কমিশন, অনুসারে, দফা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ভোট-পূর্ব অনিয়ম বলিয়া গণ্য হইবে এইরূপ কার্য ও বিকৃতিসমূহ নির্ধারণ করিয়া, সরকারি গেজেটে, বা তদ্বিবেচনায় উপযুক্ত অন্য কোনো ভারপ প্রকাশ করিবে।

(৮) কমিটির কোনো কার্যধারা দন্ডবিধি, ১৮৬০ (১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন) এর ধারা ১৯৩ ও ২২৮ এ বিধৃত অর্থে বিচারিক কার্যধারা (judicial proceeding) বলিয়া গণ্য হইবে।‍‍ 

(৯) দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (১৯০৮ সনের ৫ নং আইন) এর অধীন কোনো মামলা বিচারকালে, কমিটির কোনো ব্যক্তির হাজিরা কার্যকর করা এবং তাহাকে শপথপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদ করিবার এবং দলিল ও বস্তু দাখিল করিতে বাধ্য করা সম্পর্কিত দেওয়ানি আদালতের ন্যায় একই ক্ষমতা থাকিবে।]

১৯১খ। (১) কমিশন, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে, এই আদেশের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ নহে, এইরূপ আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবে।

Link copied!