অন্তর্বর্তী সরকারে আস্থা থাকলেও নির্বাচন নিয়ে আশ্বস্ত নয় বিএনপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১৮, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারে আস্থা থাকলেও নির্বাচন নিয়ে আশ্বস্ত নয় বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাইলেও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা পরিপূর্ণ ভরসা করতে পারছে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিক বক্তব্যে নির্বাচনের ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমা বলায় বিএনপির মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে।

গতকাল সোমবার পুলিশের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করে এসছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে।’

এর তিনদিন আগেও তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জুনে হতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত সংস্কারের ওপর।

রাজনৈতিক দলগুলো স্বল্প পরিসরে সংস্কার চাইলে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে হতে পারে। তবে, তারা বড় পরিসরে সংস্কার চাইলে নির্বাচন হবে আগামী বছর জুনে।

এ নিয়ে ‘অন্তর্বর্তী সরকারে আস্থা থাকলেও নির্বাচন নিয়ে আশ্বস্ত নয় বিএনপি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ডেইলি স্টার।

এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বরাতে বলা হয়, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কোনো মন্তব্যই কাউকে আশ্বস্ত করতে পারছে না।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে সমস্যা কোথায়? সবকিছুই নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা উচিত। কোনো কিছুই অনির্দিষ্টকালের জন্য খোলা রাখা যায় না। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় মানুষের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যকে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আগে তিনি (ড. ইউনূস) বলেছিলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে। এখন বলছেন, সংক্ষিপ্ত বা বৃহৎ আকারে সংস্কারের ওপর নির্ভর করবে। আমরা বুঝি, সংবিধান সংশোধন একটি বড় বিষয় এবং এটা করতে হলে সংসদ প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যেতে পারে। তার জন্য তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।’

‘আমরা জানি না, কেন তিনি (ড. ইউনূস) এমন অসঙ্গতিপূর্ণ মন্তব্য করছেন। আমরা আশা করি, তিনি পরিষ্কারভাবে জানাবেন যে নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

রোববার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু শুনছি। কেউ বলছে নির্বাচন হবে, কেউ বলছে হবে না। আমরা কিছু বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, ড. ইউনূস তার কথায় অটল থাকবেন। আমরা আশা করি, ডিসেম্বরে নির্বাচন দেখতে পাবো।’

১০ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছিলেন, তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে।

তবে এর দুই সপ্তাহ পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন আগামী বছরের মার্চেও হতে পারে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই এমন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে।

তারা মনে করেন, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির’ উত্থান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কৌশলকে প্রভাবিত করছে।

নাহিদ সম্প্রতি রয়টার্সকে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে ডিসেম্বরে নির্বাচন করা কঠিন হতে পারে।

তিনি আরও বলেছেন, নির্বাচনের আগে ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি।

তিনি জানান, এই ঐকমত্য এক মাসের মধ্যে হয়ে গেলে তারপরই নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এর জন্য সময় বেশি লাগলে নির্বাচন পেছানো উচিত।

নাহিদের এমন মন্তব্যের পর, বিএনপির স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠক করে এবং নির্বাচনে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এটা স্পষ্ট, সরকার দুইপক্ষের মন জোগানোর চেষ্টা করছে। একদিকে সরকার বিএনপিকে আশ্বস্ত করছে যে নির্বাচন ডিসেম্বরে, অন্যদিকে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন করার বিকল্পও হাতে রাখছে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সরজিস আলমের একটি বক্তব্য বিএনপির সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কেউ যেন কথা না বলে।’ 

নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তাদেরও লজিস্টিকের বিষয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

নির্বাচন যদি ডিসেম্বরে না হয়, তাহলে এর সম্ভাব্য সময় হতে পারে ২০২৬ সালের অক্টোবর। কারণ, ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে রমজান, এইচএসসি পরীক্ষা ও বর্ষাকাল থাকবে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচন দেরি হলে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সরকারের প্রতি অবিশ্বাসই বাড়বে।

Link copied!