সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দোকানিকে জরিমানা করা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ভিপি আজিজুল হককে একহাত নিয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
তার কথায়, “ছাত্র রাজনীতিতে নির্বাচন হচ্ছে; কি নির্বাচন হচ্ছে, না হচ্ছে- আপনারা সব দেখছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি ভিপি হয়েছেন, তাকে কি ম্যাজেস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে? তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনটা অবৈধ দোকানপাট দেখছেন...।
“অবৈধ দোকানপাট থাকতে পারে, কিন্তু সেটা জরিমানা করার ক্ষমতা কি ডাকসুর ভিপির আছে? তিনি সেটা জরিমানা করে সেটা আবার দিচ্ছেন পার্টির ফান্ডে।”
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিকের লেখা ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: নাগরিক ও জাতিবাদী জাতীয়তাবাদের সংকট’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে ‘৭ নভেম্বর প্রজন্ম’।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাবেক ভিপি রিজভী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার দায়িত্ব পালন করবেন তিনি (ভিপি), সেই জ্ঞান চর্চায় শিক্ষক-ছাত্রদের অংশগ্রহণ থাকবে- এইটা কতটুকু নিশ্চিত করা হচ্ছে; সেটা না করে আপনি যে বৈধ-অবৈধ তার কাছ থেকে ফাইল করছেন।
“আমিও ভিপি ছিলাম একটা ইউনিভার্সিটির। আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কে দোকানদারি করছে, কে মার্কেট করছে- সেটা দেখিনি। এটা তো ইউনিভার্সিটির অথরিটি আছে, প্রশাসন আছে- তারা এগুলো দেখবে।
“একজন ছাত্র নেতা হিসেবে বলতে পারেন যে, ‘ক্যাম্পাসে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে- স্যার, এটা দেখেন’। অথচ আপনি গিয়ে জরিমানা করে দিচ্ছেন, আর সেই জরিমানার অর্থ জামায়াতের বায়তুল মালে জমা হচ্ছে… এটা কোন ধরনের বিষয়?”
গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের এক দোকানিকে ‘টেস্টিং সল্ট’ রাখার অভিযোগে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন ছাত্রশিবিরের ‘সমর্থন’ নিয়ে হলের ভিপি হওয়া আজিজুল।
এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর সূর্যসেন হলের ক্যান্টিন মালিককে খাবারের মান উন্নত করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন। কর্মচারীদের হাফ প্যান্ট পরা নিয়ে ক্যান্টিনের লোকজনকে তার শাসানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
রিজভী বলেন, “আমার দেখছি, ইউনিভার্সিটির হলগুলোতে খাট দিচ্ছে… লোহার খাট। ভাই এটা কি ইয়ের দায়িত্ব নাকি কোন রাজনৈতিক সংগঠন বা ডাকসুর দায়িত্ব? আপনি ছাত্রদের দাবি দাওয়া নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে বার্গেনিং করবেন। এটার বাইরে তো না।
“এটা কি এতিমখানা নাকি যে আপনি সেখানে লোহার খাট দেবেন, আপনি সেখানে কী বলে যে খাবার জন্য ডাইনিং টেবিল দেবেন। এই জিনিসগুলো কিন্তু খুব বাজে আলামত বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।”
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, “এই যে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজকে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যে ধরনের হুমকি-হুংকার আসছে, বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে যাচ্ছে, যেভাবে এগুচ্ছে এবং যে সমস্ত শক্তির উত্থান ঘটছে- এটাও এক ধরনের আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার মানে অটুট রাখার জন্য একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বলে আমি মনে করি।’’
‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে’
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “একথা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে- ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রেই। সেই গণঅভ্যুত্থানে তারেক রহমান নেপথ্যের একজন কুশীলব হিসেবে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবদান রেখেছিলেন যাতে করে বিগত চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ত্বরান্বিত হয়েছিল এবং স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।
“আজকের নতুন প্রজন্ম, ৭ নভেম্বরের প্রজন্ম, ২০২৪ এর জুলাই-অগাস্টের প্রজন্ম আমি সকলের প্রতি আমি আহ্বান করব যে- আসুন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে কথাটি বলেছিলেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’- সেই আদর্শে আমরা উদ্বুদ্ধ হই এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে আদর্শ সেই আদর্শকে অনুসরণ করে আমরা বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বের বুকে পুনরায় একটি সম্মানশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব ইনশাআল্লাহ।”
আবদুল মঈন খান বলেন, “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল, যা হলো একটি ফুলের মালার সমারোহে; যে মালার একটি ফুল হলো- বাঙালি, চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, ফিল, গোল, মুন্ডা… কাজেই বুঝতে হবে যে আজকে কেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন করেছিলেন; সবাইকে একটি ফুলের মালায় তিনি আবদ্ধ করেছিলেন।
“যেখানে ভিন্ন ভিন্ন ফুল থাকবে, কিন্তু যখন বাংলাদেশের প্রশ্ন আসবে- তখন সেটি হবে একটি ফুলের মালায় সমন্বিত, সকলের সমন্বয়ে। এই মালাটির নাম দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের চেয়ে মহৎ ও চমকপ্রদ উদাহরণ আর কী হতে পারে, আমার জানা নেই।”
‘দেশি-বিদেশি চক্রান্তে’ জিয়ার মৃত্যুর পরে বিএনপির হাল ধরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের কথা তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “সেই পথ ধরেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপি এগুচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইয়াছির ওয়াদাদ তন্ময়। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, মারুফ মল্লিক, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল হুদা বাবু, মুক্তিযোদ্ধা দলের হারুন অর রশিদ।