জানুয়ারি ৮, ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যা তাদের সামনে নিয়ে এসেছে বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ২২২টি আসনে বিজয় নিশ্চিত করে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এদিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। একটি করে আসন পেয়েছে কল্যাণ পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
তবে সারাদেশে মোট ৬২টি আসনে জয়ী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর সংবিধান অনুযায়ী দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে বিরোধী দল ঘোষণা করা হয়। এক্ষেত্রে অন্যান্য দলের প্রাপ্ত আসনগুলোর চেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী একজোট হয়ে চাইলেই তারা বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানাতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, “সংসদে বিরোধী দল হওয়ার প্রধান সুযোগটি রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাতে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সুযোগ রয়েছে প্রতি দলেরই বিরোধী দল হওয়ার।
“স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছেই প্রথম সুযোগ আসবে বিরোধী দল হওয়ার। তারা যদি ২০-৩০ জন নিয়ে একটি জোট গঠন করে এবং বিরোধীদল হওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেয় , তবে স্পিকার রুলস অব প্রসিডিউর অনুযায়ী তাদের বিরোধীদল বলে ঘোষণা দিবেন। এক্ষেত্রে সংসদে যে বিরোধী দল হবে তার কোনো নাম না দিলেও চলবে।”
এম কে রহমান ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ দুজনেই মনে করেন, যদি তারা একত্রিত হতে না পারে এবং বিরোধী দলের দাবি না তোলে তবে জাতীয় পার্টির কাছে যাবে সে সুযোগ। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি যে কোনো একটি দলের অধীনে গিয়ে বিরোধী দল হতে চায় তবে একটি করে আসন পাওয়া দলের সাথে তারা বিরোধী দলে যুক্ত থাকবে।
এম কে রহমান বলেন, “এ ক্ষেত্রেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ হতে স্পিকারকে চিঠি দিতে হবে, যেখানে জানাতে হবে যে তারা কোন নির্দিষ্ট দলের সাথে যোগ দিতে চান। স্পিকার তখন সেই দলকে বিরোধী দল ঘোষণা করবে।”
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, “যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন তারা সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন। আর ব্যক্তিগতভাবে সংসদের বাইরে দলীয় কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারবেন।”
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সাংবাদিকদের বলেছেন, “বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিরোধী দল হওয়ার জন্য জোটবদ্ধ হয়ে আবেদন করবে কিনা তা না জানা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না তারা বিরোধী দল হচ্ছে কিনা।”
এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গ্রুপ তৈরি করে যদি বিরোধী দল হতে চায় তবে তা আইনগতভাবে সম্ভব।”
তারা যদি কোনো দলে (জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ) যোগ দেয় আর সেই দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তবে তারা বিরোধী দল হবে। তবে তিনি মনে করেন না যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে বিরোধী দল করা হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিরই বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, “জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকবে বলে মনে হয়। আওয়ামী লীগের সাথে যোগ দিয়ে নির্বাচন করলেও জাতীয় পার্টি অস্তিত্ব হারায়নি। দল হিসেবে তাদের একটা নিজস্ব স্বকীয়তা আছে।”
সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মূলত আওয়ামী লীগেরই সদস্য। এজন্য হয়তো এটা করা হবে না। আওয়ামী লীগ তাদের গ্রহণ করে নিতে পারে। তেমনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা দলের পদ ছেড়ে বিরোধী দলের সাথে যুক্ত না হয়ে স্বতন্ত্রই থাকতে পারে, বলেন তিনি।