নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন

আমার প্রার্থিতা বাতিলের কোনো সুযোগ নাই: বাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম

আমার প্রার্থিতা বাতিলের কোনো সুযোগ নাই: বাহার

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে পরপর তিনবার শোকজের পর বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনে হাজির হন কুমিল্লা -৬ আসনের প্রার্থী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার।

ইসি হাবিবুল আউয়াল, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, সচিব জাহাংগীর আলম, কমিশনার মোঃ আলমগীর সহ নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তাসহ আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের সাথে শোকজের বিধিমালা অনুযায়ী বৈঠকে বসেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, আমার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগের উত্তর দিয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমার আইনজীবী এ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।

বাহার আরও বলেন, একটা অভিযোগ এসেছে- কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়ামে নির্বাচনি প্রচারণার সময় গাড়িতে ওঠার আগে একাত্তর টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধিকে গালিগালাজ করেছি, ধর ধর বলে চিৎকার করেছি। এই কথাগুলো শোভনীয় নয়। আমি কুমিল্লার রাজনীতি করি পঞ্চাশ বছর, কুমিল্লায় আমি হাঁটলে আমার সঙ্গে দুই-একশো লোক হাঁটে। 

তিনি আরও বলেন, আমি মানুষের কাজ করি, মানুষের রাজনীতি করি। সততার সঙ্গে মানুষের হক আদায়ের কাজ করি । আমাকে এই বয়সে এসে মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পর কোনো সাংবাদিককে ধর ধর বলতে হবে এত নিচে নেমে আমি রাজনীতি করি না। ঘটনাস্থলে তো একুশে টিভিও ছিল তারা তো অভিযোগ করেনি। আমি দ্বিতীয় জায়গায় প্রচারণা শেষ করে তৃতীয় জায়গায় গিয়ে শুনছি একাত্তর টিভির প্রতিনিধিকে এইসব বলা হয়েছে।

হাত-পা ভেঙে দেয়ার মন্তব্যের বিষয়ে কুমিল্লা -৬ আসনের এই প্রার্থী বলেন,  হাত-পা ভেঙে দিব- এমন কোনো ইঙ্গিত আমি সাংবাদিকদের দেইনি। আমি বিএনপি জামায়াতকে বলেছিলাম তাদের হাত পা ভেঙে দিব। বিএনপি জামায়াত নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করছে। ট্রেনে আগুন দেওয়াসহ ট্রেনের বগি ফেলে দিচ্ছে। আমার নির্বাচনী প্রচারণার দিন ট্রেনের চারটা বগি পড়ে গিয়েছে। 

বাহার আরও বলেন, আমি ঐদিন এক রিকশাওয়ালার গল্প পড়ছিলাম । রিকশা চালিয়ে একটা গ্যারেজে থাকতেন তিনি। নির্বাচন প্রতিহতে বিএনপি-জামায়াত সেখানে আগুন দিলে তিনি মারা যান। এইসব ব্যাপার আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। ট্রেনের চার-চারটে বগি খুলে যাবার পর একজন মা ও শিশু মারা গেছে এটাও আমাকে খুব করে ভাবাচ্ছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কুমিল্লা নবীনগর থানা থেকে ৫২টা মেয়েকে উদ্ধার করেছি। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পরেও আমার মনে হয়েছে মেয়েরা এখনো নিরাপদ নয়। 

আমি আমার আবেগ থেকে বলেছি বিএনপি-জামায়াতকে কোনো ভোটকেন্দ্রে পেলেই তাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে। আমি আমার বিরোধী কাউকে ইঙ্গিত করে বলিনি। তারা যেন কোনো নির্বাচনী কেন্দ্রে কোনো নাশকতা না করতে পারে। 

কোনো নাশকতা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো আছে আপনাকে কেন এর দায়ভার নিতে হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ২০১৪ সালে কুমিল্লায় যখন আগুন লেগেছিল আ.ক.ম বাহার কুমিল্লার প্রতিটা রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে প্রতিহত করেছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা মনোভাব রেখেই ব্যাপারগুলো বলেছি। ২০১৪ সালে জামায়াত-বিএনপি তো গুলি করেছে সেই খবর তো আসেনি। আমি বিএনপি-জামায়াতকে হাত-পা ভেঙে দিতে চেয়েছি। আর এই বক্তব্য যদি রাজনৈতিক বক্তব্য হয় তবে আচরণবিধি নেই। বিএনপি-জামায়াত তো নির্বাচনেই আসেনি। যারা নির্বাচনে আসে নাই তাদের কে নিয়ে কেন আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। 

নির্বাচন কমিশন কি তাহলে ভুল করেছে আপনাকে শোকজ চিঠি নিয়ে এ প্রশ্ন তোলা হলে বাহার বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের বিধিমালা অনুযায়ী তাদের স্ট্যান্ড নিয়েছেন। আমি বলেছি এটা আমার রাজনৈতিক বক্তব্য তারপরও যেহেতু চিঠি আসছে আমি এ ধরণের কোনো বক্তব্য দিব না। কিন্তু আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে- এটাও তো নির্বাচন কমিশনকে বলেছি। 

আপনি কি নির্বাচনি আইনবিধি লঙ্ঘন করেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে এই নৌকা প্রার্থী বলেন, প্রথম যে অভিযোগ আসছে আমি তো ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না, এটা তো ভুয়া অভিযোগ। কিন্তু দ্বিতীয় ঘটনায় আমি আমার আবেগ থেকে বলেছি বিএনপি- জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেছি- আমি তাদের হাত-পা ভেঙে দিব। কোনো বিরোধীকে ইঙ্গিত করিনি। আমি আমার অভিযোগর উত্তর দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন আমাদের তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।

প্রার্থিতা বাতিলের ব্যাপারে বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাকে কিছু বলেনি তবে আমি আমার বক্তব্য দিয়ে তাদের আশ্বস্ত করতে পেরেছি। আমি নির্দোষ আমার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

অতীত নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে আ.ক. ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, আমাকে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল আমি যেন কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে না জড়াই। আমি আমার একটা প্রার্থীর সঙ্গে কোথাও কোনো প্রচারণায় থাকিনি। আমি যেহেতু ভোটার, একজন ভোটার হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয়েকেন্দ্রে ছিলাম কিন্তু আমি ঐদিন ও কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাহার বলেন, আমার প্রার্থিতা কেন‌ বাতিল হবে! আমি তো অভিযোগকৃত কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি। আর দুঃখপ্রকাশ যদি বলতে হয় তবে সেইটা একাত্তর টিভির প্রতিনিধিকে যা বলা হয়েছে তা আসলেই কাম্য নয়। 

Link copied!