পিআর পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী সংসদেই হবে: মির্জা ফখরুল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম

পিআর পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী সংসদেই হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত ‘আগামী নির্বাচিত সংসদেই’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “এই বিষয়টা আগামী পার্লামেন্টের উপরে ছেড়ে দিতে হবে। আগামী পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা যদি মনে করেন যে, এটা (বিদ্যমান ভোট পদ্ধতি) থেকে পিআরে যাবে, যাবে। জনগণ যদি মনে করে যে পিআরে যাবে, যাবে। কিন্তু এখন তো এটা সম্পর্কে কিছুই জানে না।”

জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি তুলেছে, তা নিয়ে বিএনপির ‘উদ্বেগের’ কারণও ব্যাখ্যা করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে, ব্যক্তির যে স্বাধীনতা থাকে তার নির্বাচিত রিপ্রেজেন্টেটিভ চুজ করবার, সেই স্বাধীনতাটা দলকেই চুজ করতে হয়। অর্থাৎ ওই দলকে ভোট দিতে হবে।

“দল রিপ্রেজেন্টেটিভ নমিনেট করে তাদেরকে পার্লামেন্টে আসার জন্য। এটার সঙ্গে আমাদের দ্বিমত।… এই বিষয়গুলো আমি অবতারণ করলাম এইজন্য যে এগুলো আমাদের সামনে আসছে।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সদস্যদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা হয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেন এবং আসন্ন নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধিদের বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করে একটি পত্র হস্তান্তর করেন।

বিএনপি মহাসচিব আগামী নির্বাচনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান এবং তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার কথা বলেন।

‘বাংলাদেশের আত্মা ঠিক রাখতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, “একটা জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশের সমাজের, রাষ্ট্রের, জাতির আত্মা বা সোল, এই আত্মা ১৯৭১ সালের আমরা যে অসাম্প্রদায়িক একটা বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যুদ্ধ করেছি, আমাদের যে সোল আছে, এই সোলকে আমরা নষ্ট হতে দিতে চাই না।”

“আজকে যেকোনো ভাবেই হোক, একটা প্রচেষ্টা আছে যে ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করার, সেই ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করার কোনো অবকাশ এখানে আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা সবাই একটা জাতি, এটাকে আলাদা করার সুযোগ নেই।”

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা আগামী নির্বাচনে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি, আপনাদের পুরো সম্প্রদায়ের। আমরা মনে করি, জন গোমেজ শুধু আপনাদের প্রতিনিধি নন, তিনি আমাদের প্রার্থী। তিনি বিএনপির ভালো জায়গায় ছিলেন এবং আছেন।”

‘সংখ্যালঘু নন’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনাদের যে দাবি, যেটা আপনারা আশা করেছেন দলীয় মনোনয়নের জন্য, নিঃসন্দেহে আমি আপনাদের এই যে পত্রটি, আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেব এবং সেটাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখব এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।”

তিনি বলেন, “আমাদের যে প্রত্যাশা আপনাদের কাছে সবসময় থাকবে,… আপনাদের দাবি-দাওয়া আপনাদের যে প্রয়োজন, সে কথাগুলো আপনাদের জোরের সাথে বলতে হবে। আপনারা কখনোই মনে করবেন না যে আপনারা সংখ্যালঘু। ‘আমরা ক্ষুদ্র’ এই কথাগুলো মনে করলে কিন্তু পিছিয়ে পড়তে হবে।

“আজকে যারা এখানে আছেন, আপনারা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ, সবাই এটা অর্জন করেছেন নিজের গুণাবলী দিয়ে, যোগ্যতা দিয়ে। আপনাদের প্রয়োজনগুলো জোরেই বলতে হবে।” 

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে একটি অবাধ, সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, এটাই তারা চেয়েছিলেন।

“তারা চেষ্টা করছেন, নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছেন। কিন্তু মাঝে মাঝেই আমরা এমন কতগুলো বিষয় দেখতে পাই যে বিষয়গুলো আমাদেরকে খুব উদ্বিগ্ন করে তোলে।”

১৭ অগাস্ট জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তারিখ হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যেগুলোতে একমত হয়েছে, সেগুলোতে সব দল স্বাক্ষর করবে এবং যেগুলোতে একমত হতে পারেনি সেগুলো আসন্ন নির্বাচনে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের ম্যানিফেস্টো হিসেবে নিয়ে আসবে জনগণের সামনে। সেটাকে প্রস্তাব আকারে তারা তুলে ধরবে, সেভাবেই তারা চিন্তা করেছেন।”

খ্রিষ্টান লইয়াস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আলবার্ট রোজারিওর সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের অনিল লিও কস্তার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও, পিউস কস্তা, রীতা রোজলীন কস্তা, প্রতাপ আগাস্টিন গোমেজ, শংকর প্যাট্রিক কস্তা, আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন।বাংলাদেশ ভ্রমণ 

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক জন গোমেজ, রমেশ দত্ত, নির্বাহী কমিটির সদস্য সুশীল বড়ুয়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তরুণ দে, মাইকেল গোমেজ, মৃগেন হাগিদক, মন্টু পিটার রোজারিও, ডিউক পি রোজারিও, ফনিন্দ্রনাথ কর্মকার, বাবুল ডেভিড গোমেজ, টুটুল পিটার রড্রিকস, চন্দন জাকারিয়া গোমেজ, লুইস গোমেজ, শীতল রিবেরু, জজলিন গোমেজ, মার্টিন পেরেরা, স্বপন হাওলাদার, পেপিলন পিউরিফিকেশন, প্রশান্ত পিউরিফিকেশন, এরিক ডি কস্তা, পলাশ পিরিচ, আইভি সিং, স্টিভ যোসেফ কস্তা, এলবার্ট রিপন বল্লভ, বার্নাড পলাশ দাস, মিলন আই গোমেজ,ধীরেন দাস, প্রবীর বিশ্বাস, সুমন ডমিনিক গোমেজ, এভারিস রোজারিও, ক্রিস্টোফার দেশাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!