আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনের ফলাফল অনেকটা পূর্বনির্ধারিত। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। ফলে ভোটের মাঠে নেতা হিসেবে টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হওয়ার জন্য প্রস্তুত শেখ হাসিনা, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্যও একটি পরাজয়।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নিবন্ধে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিজয় বাইডেনের জন্যও একটি পরাজয় চিহ্নিত করবে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী গণতন্ত্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশকে তাঁর প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন।
আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে যে কোনো নারী নেত্রীর চেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা। তিনি কট্টরপন্থী ইসলামকে দমন করেছেন, সেনাবাহিনীর উপর বেসামরিক আধিপত্য নিশ্চিত করেছেন এবং দেশকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছেন- এমন অর্জন যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের নেতারা দাবি করতে পারেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্ব পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের মোড়লের ভূমিকায় রয়েছে। নিকট অতীতেও দেশটির বিরুদ্ধে অনেক গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতে সহযোগিতা কিংবা ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও মার্কিন ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অন্যতম এলিট ফোর্স র্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়েও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
আরও বলা হয়, ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার যত ত্রুটি থাকুক বিকল্প আরও তিক্ত। শেষবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে এবং ভারতের বিরোধিতাকারী সন্ত্রাসবাদী-বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির দীর্ঘদিনের জোট। এজন্য ভারতীয়রা চায় না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। মানুষ হোয়াইট হাউসের পরিবর্তে শেখ হাসিনার ওপর বেশি ভরসা করে।
‘বাইডেনের মূল্যবোধকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির একটা পরীক্ষণকেন্দ্র বাংলাদেশ’- এই ধারণার কারণে বাংলাদেশে মার্কিন ব্যর্থতা চলমান রয়েছে। বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশে গণতন্ত্র ফেরি করার চেয়ে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক স্বার্থকে ফেরি করা ওয়াশিংটনের জন্য বেশি জরুরী ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
যদিও শেখ হাসিনার অধীনে দেশ একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হয়েছে, তবে তা অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে গণতান্ত্রিক শিকড়কে মজবুত করেছে। উপরন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি যার উপর নির্ভরশীল সেই গার্মেন্টস খাতের সব থেকে বড় রপ্তানির জায়গা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ। এই বিষয়টিই হতে পারতো বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইডেনের জন্য সবথেকে বড় অস্ত্র। কিন্ত হোয়াইট হাউস এই অস্ত্রটি ব্যবহার করতে বেশি অপেক্ষা করে ফেলেছে অথবা অতি-আত্মবিশ্বাসের বশে ব্যবহার না করে শেখ হাসিনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনাকে ২টি বড় গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি, যেখানে অনেক বিতর্কিত দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ২০২১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য গঠিত র্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত জনসম্মুখে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দেওয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধাদানকারী অযুহাতে বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
নিবন্ধটির ভাষ্য অনুযায়ী, হোয়াইট হাউজের বোঝা উচিত ছিল এই ধরণের তীক্ষ্ণ কথাবার্তা এবং ভাসাভাসা পদক্ষেপ উল্টো বুমেরাং এর মতো হতে পারে। তাদের দেখা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগের ইতিহাস। যারা পাকিস্তানিদের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিয়েছে, যে পাকিস্তান ছিল মার্কিনীদের আর্শীবাদপুষ্ট। শেখ হাসিনা খুব সুদক্ষভাবে এবং অবিস্মরণীয় উপায়ে রাশিয়া , চীন এবং বিশেষভাবে ভারতের সাথে সংযোগ নিয়ে মার্কিন চাপ মোকাবিলা করেছেন।
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এবারের নির্বাচন সেই নিষেধাজ্ঞাকেও ‘বুড়ো আঙুল দেখানোর’ মত ব্যাপার- এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে নিবন্ধে।
(ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নিবন্ধ অনুযায়ী লিখিত)