দ্বাদশ জাতীয় সংসদ

নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন ডা. সামন্ত লাল

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী

জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৮:২৫ পিএম

নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন ডা. সামন্ত লাল

ডা. সামন্ত লাল। ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নতুন মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হলেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। কোনো নির্বাচনীয় প্রার্থী নয় বরং দেশে প্রথমবারের মতো সংসদ প্রার্থীদের বাইরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন তিনি।

৩৬ বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর হবিগঞ্জের নাগুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন সামন্ত লাল সেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সার্জারিতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম বার্ন বিভাগ চালু হয়। সামন্ত লাল সেন সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শুরুর ইতিহাসে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের ৫০০ শয্যার এই ইনস্টিটিউট পোড়া রোগীর চিকিৎসায় শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান।

তবে প্রতিষ্ঠানটি ৫০০ শয্যা হওয়ার পেছনে আছে নিষ্ঠা, মনোযোগ ও ত্যাগের কাহিনি। বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের তথ্যমতে ‘বার্ণ ইউনিট শুরু হয়েছিল ৫ শয্যা দিয়ে। আজ তা ৫০০ শয্যা। মাঝে লম্বা সময়, নানা চড়াই–উতরাই।’

১৯৮০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন সামন্ত লাল সেন। পোড়া রোগীদের তখন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাখা হতো। এমনকি বারান্দায় বা বাথরুমের পাশেও রোগীদের ঠাই হতো। তখন সার্জারি বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক কবির উদ্দীন আহমেদ। আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য পৃথক কিছু করার চিন্তা শুরু করেন তাঁরা। মাত্র পাঁচটি শয্যা দিয়ে ৩৪/বি নামে একটি ওয়ার্ড চালু করেন। ২০০০ সালে ঢাকা মেডিকেলে ৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং ২০০৩ সালে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে ওই ইউনিট। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন অধ্যাপক সেন।

২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১৭ জন, আহত হন প্রায় ৫০০ মানুষ। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে আগুনে পোড়া রোগীর ঢল নেমেছিল সেদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জরুরি ও জটিল চিকিৎসার আয়োজন বাড়ানোর নির্দেশ দেন।এরপর ২০১২ সালে ইউনিটকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় এবং দেশের ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হয় স্বতন্ত্র বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। সারা তিন শতাধিক পদ সৃষ্টি করা হয়। একপর্যায়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের শয্যা সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০০।

অগ্নিদগ্ধদের উন্নত চিকিৎসা, পোড়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’–এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ১৮ তলা ভবনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ তৈরি হয় এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ণ ইউনিট এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। 

১৯৮৬ এর পর থেকে এখন পর্যন্ত বার্ণ ইউনিটের দায়িত্ব পালনে কমতি রাখেননি সামন্ত লাল। ৩৬ বছর বার্ণ ইউনিটের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের পর মন্ত্রীসভার বাইরে থেকে একজন চিকিৎসক হয়ে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ডা. সামন্ত লাল । 

 

Link copied!