র‌্যাব মুখপাত্র

‘হামলার সময় বিদ্যুৎ কেন ছিল না- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’

জাতীয় ডেস্ক

এপ্রিল ৪, ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম

‘হামলার সময় বিদ্যুৎ কেন ছিল না- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’

ব্রিফিংয়ে র‌্যাব মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন। ছবি: সংগৃহীত

রাত সোয়া আটটা থেকে নয়টার মধ্যে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি ধারণা করছেন যে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এই হামলার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘হামলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। যতদূর জানতে পেরেছি, হামলায় প্রায় শতাধিক অংশগ্রহণ করেছে।’

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে নিজ কক্ষে একথা বলেন তিনি।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘আপনারা জানেন কেএনএফের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি সর্বপ্রথম র‍্যাব সামনে এনেছে। এই কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) টাকার বিনিময়ে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়াকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ ও  প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। এই প্রশিক্ষণের জন্য তারা ৩ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় র‍্যাব দীর্ঘ একটি অভিযান চালায়। অভিযানে ট্রেনিং সেন্টার শনাক্ত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ শতাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও কুকি-চিনের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিযানের ফলে অনেকটা কোণঠাসা ছিল। সম্প্রতি শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলছিল। এই কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিনের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখে। এই আলোচনা চলমান অবস্থায় গত ২ এপ্রিল শতাধিক কেএনএফ সদস্য সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হামলাকারীরা বাংলাদেশ পুলিশের ১০টি অস্ত্র ও আনসারের চারটি অস্ত্র লুট করে। ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন বোল্টের চাবি না দেওয়ায় তাকেও অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপরের দিন তারা থানচিতে আরও দুটি ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে। ব্যাংক দুটি থেকে ভল্টের চাবি নিতে না পারলেও ব্যাংকে থাকা গ্রাহকের বেশ কিছু টাকা নিয়ে যায়।’

ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, প্রথম দিনের হামলায় তারা কোনো গাড়ি ব্যবহার করেনি। রাতের বেলা এসেছিল। প্রথম দিন বিদুৎ না থাকায় কোনো ফুটেজ ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের হামলায় তারা চাঁদের গাড়ি ব্যবহার করে। এই দিনের বেশ কিছু ফুটেজ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন: ‘অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তার মুক্তিতে ২০ লাখ টাকা দাবি কেএনএফের’

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্তের কাজ চলছে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যাংক ম্যানেজারকে অক্ষত ও নিরাপদে ফিরিয়ে দিতে চাই। এজন্য নানা কৌশলে কাজ করছে র‍্যাব। এখন পর্যন্ত ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে তার পরিবারের কথা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। এই সন্ত্রাসী সংগঠন মুক্তিপণ হিসেবে ১৫-২০ লাখ টাকা দাবি করছে। তার অবস্থান শনাক্তে কাজ চলছে। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি, কীভাবে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা যায়। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ স্থানীয়দের দেখিয়ে ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করে জড়িতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছি। কারণ কুকি-চিন সম্প্রদায়ের কিছু লোক এই কাজ করছে।’

শতাধিক লোক মিলে এমন হামলার ঘটনায় গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা দেখছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে অভিযান বা গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো কঠিন। আরেকটা বিষয় জঙ্গি অভিযান চলার সময়ে অনেকের বিষয়ে তথ্য ছিল, বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতার অভিযোগ ছিল। কিন্তু শান্তি আলোচনা চলমান থাকায় আমরা চাইছিলাম তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। কিন্তু তারা সেটি করেনি। আমাদের কাছে ব্যাংকে হামলার তথ্য ছিল না। কিন্তু তাদের টাকার প্রয়োজনের তথ্য ছিল। এই তথ্য বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরবরাহ করেছি। জঙ্গি অভিযানেও আমরা বলেছি টাকার জন্য তারা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণসহ নানা সহযোগিতা করেছে।’

ব্রিফিংয়ে মঈন বলেন, ‘ব্যাংকে হামলার পাশাপাশি তারা পুলিশ ও আনসারদের ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। এছাড়া মসজিদ ও আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার পরে শান্তি আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যা এরই মধ্যে শান্তি কমিটি ঘোষণা করেছে। এখন সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চলছে।’

Link copied!