আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান ইউ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ১২:১৭ পিএম

আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান ইউ

সিঙ্গাপুর, তখন তৃতীয় বিশ্বের একটি অখ্যাত দেশ। মাথাপিছু বাৎসরিক আয় তখন মাত্র ৫০০ ডলার! দারিদ্র আর অভাবে ভুগছে অস্তিত্ব রক্ষায়। এরকম এক পরিস্থিতিতে দেশটির ক্ষমতায় আরোহন করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে দেশকে টেনে তোলেন অন্য এক উচ্চতায়। দেশ তখন তৃতীয় বিশ্ব থেকে পৌঁছে যায় উন্নত বিশ্বের কাতারে!

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ মেয়াদে ১৯৯০ সালে, দেশটির মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার। শতকরার হিসাবে প্রায় ২,৮০০% উন্নতি!

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট একটি বন্দর শহর থেকে, দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার রূপকারও এই লি কুয়ান ইউ।

তার নেতৃত্বেই ৩১ বছরে ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথপিছু আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে ৫৫ লাখ মানুষের দেশ সিঙ্গাপুর। তাই লি কুয়ানকে বলা হয় আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক।

আজ ১৬ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) লি কুয়ান ইউয়ের ৯৮ তম জন্মবার্ষিকী।

চিনা বংশোদ্ভূত বাবা লি চিন কুন ও মা চুয়া জিম নিওর ঘর আলো করে ১৯২৩ সালের এই দিনে জন্ম নেন লি। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে অর্থনীতিতে স্নাতক করবার পর ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক পাস করে ব্যারিস্টার হন তিনি।

দেশে ফিরে কয়েক বছর আইন-ব্যবসা করে ১৯৫৪ সালে খুললেন রাজনৈতিক দল পিপলস অ্যাকশন পার্টি। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার সাথে ফেডারেশন গঠন করে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পায় সিঙ্গাপুর। এর দুই বছর বাদে নির্বাচনে জিতে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হন  লি।  ১৯৬৫ সালে থেকে শুরু করে শক্ত হাতে প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ চালান ১৯৯০ পর্যন্ত।

মাত্র ৭১৬ বর্গ কিলোমিটারের নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে নেই কোনও প্রাকৃতিক সম্পদও। কিন্তু দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে লি শুরুতেই হাত দিলেন পরিকল্পিত নগরায়ন আর উন্নত অবকাঠামো বিনির্মাণে।

দেশ গড়ার কাজে শুরুতেই যে জিনিসটি দরকার তা হলো জাতিগত ঐক্য। সরকারি আবাসনের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি আরোপ করে সম্প্রদায়সমূহের মাঝে বৈষম্য কমান তিনি।

ছোট আয়তনের দেশ হওয়ায় শিল্প স্থাপনের পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা ছিলো না। ছোট দেশ বলে একে সবুজ-পরিপাটি বানিয়ে বিনিয়োগকারীর দৃষ্টি আকর্ষণও সহজ। লি সেই সুযোগটাই কাজে লাগান।

লি সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহর বিনির্মাণে বানালেন 'গার্ডেন সিটি অ্যাকশন কমিটি'। রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ গাছ তো বটেই, পুরো সিঙ্গাপুরের দশভাগ জায়গা জুড়ে আছে কেবল পার্কই। বর্জ্য-ব্যবস্থাপনায় এতটাই কড়াকড়ি যে, দেশটিতে চুইংগাম খাওয়াই নিষিদ্ধ।

পুরো শহরের অবকাঠামো ঢেলে সাজালেন। প্রতিটি অট্টালিকার সাথে রেখেছেন খেলার মাঠ, বিনোদনের উপযোগী জায়গা।

ছোট্ট একটা দেশ; লাখ লাখ প্রাইভেট কার চললে দুদিনে দেশের রাস্তা হবে অচল। তাই তিনি চেয়েছেন উন্নত গণপরিবহনব্যবস্থা। এ  লক্ষ্যে রেলখাতও ঢেলে সাজান তিনি।

অবস্থায় ২০১৫ সালের ২৩ শে মার্চ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ানের।

Link copied!