এ দেশে নির্ভয়ে সত্য উচ্চারণ করবার মতোন সাহসী বুদ্ধিজীবী ভয়াবহ রকমের সংখ্যালঘু। হাতে গোনাই বলা চলে। কারণ বুদ্ধিজীবী নির্ভয়ে মত প্রকাশ করে সরকার কিংবা ক্ষমতাশালী, উগ্রবাদীদের চক্ষুশূল হতে চান না। আর যারাই সত্য উচ্চারণ করেছেন তারা পদে পদে বাধা বিপত্তির শিকার হয়েছেন।
শাসক, সমাজের মোড়ল ও ধর্মান্ধদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্যি কথাটি বলার মতো ছিলেন খুবই নগণ্য সংখ্যক বুদ্ধিজীবী। সেই সত্যি উচ্চারণ করে শাসক ও মৌলবাদী এ দুইয়ের রোষানলে যারা পড়েছিলেন এদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন হুমায়ুন আজাদ।
হুমায়ুন আজাদ। বহুমাত্রিক ও প্রথাবিরোধী লেখক, গল্পকার, গবেষক, ঔপন্যাসিক ও কবি। সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। ছিলেন উগ্র মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চক্ষুশূল। আজ ১২ আগস্ট বাংলাদেশের এই ক্ষণজন্মা লেখকের ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে জার্মানির মিউনিখ শহরে তিনি মারা যান।
১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখালে গ্রামে জন্মহ্রগণ করেন হুমায়ুন আজাদ। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম হুমায়ুন কবির। পরে পরিবর্তন করে হুমাযুন আজাদ নাম গ্রহণ করেন।
বিক্রমপুরে জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। পরে ১৯৭৬ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন তার "ঘড়ি বলে টিক টিক" শিরোনামে প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছাপা হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় গতানুগতিক চিন্তাকে তিনি সচেতনভাবেই পরিহার করেছেন। তিনি যা ভাবতেন তাই সাহসের সঙ্গে লিখতেন বলে অনেকেরই বিরাগভাজন হয়েছেন।
হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ ও ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ প্রকিাশিত হলে দেশে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ২০০৪ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এতে স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামকে পরোক্ষভাবে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দলের নেতাকর্মীরা।
২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জাতয়ি সংসদে পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসটিকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করেন। এ ধরণের লেখা বন্ধ করতে ব্ল্যাসফেমি আইন প্রণয়নে ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পাওয়া এই লেখককে চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত করে সেই চিহ্নিত মৌলবাদীরা। হামলার পরের দিন তাঁর ভাই মঞ্জুর কবির মামলা করেন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ওই বছরেই রহস্যজনকভাবে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে জার্মান পুলিশ।