‘মিয়া ভাই’কে বিদায় বলতে নেই, বলা যায় না

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১৫, ২০২৩, ০১:৩৫ পিএম

‘মিয়া ভাই’কে বিদায় বলতে নেই, বলা যায় না

বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত বর্ষীয়ান চিত্রনায়ক, সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক আজ সোমবার মারা গেছেন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রেখেছেন অভিনেতা ফারুক। অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

দীর্ঘ সময় ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক। এর মধ্যে দুবার তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়ায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২০২১ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে যান ফারুক। তখন রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়লে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সিঙ্গাপুরে প্রায় চার মাস ধরে আইসিইউতে ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মাস ছয়েক আগে তাঁকে কেবিনে নেয়া হয়। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।

১৯৪৮ সালে ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে মানিকগঞ্জে জন্ম হলেও তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকাল কাটে পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ফারুক ছিলেন সবার ছোট। ব্যক্তিজীবনে ফারুক ফারজানা পাঠানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাঁরা দুই সন্তানের বাবা-মা।

অভিনেতা ফারুক তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তাঁর।

অভিনয় জীবনে টার্নিং পয়েন্ট আসে ১৯৭৩ সালে। সে বছর খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের নজরে পড়েন তিনি।

১৯৭৫ সালে সুজন সখী ও লাঠিয়াল সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দর্শক হৃদয়ে চিরস্থায়ীভাবে জায়গা করে নেন ফারুক। এ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান এ অভিনেতা।

এরপর কাজ করেন সূর্যগ্রহণ, মাটির মায়া ও নয়নমনি চলচ্চিত্রে। এ তিনটি সিনেমাতেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

শহীদুল্লাহ কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সারেং বৌ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ফারুক। এ চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও ফারুকের অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।

চিত্রনায়ক ফারুকের আরও যেসব সিনেমা দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে সেগুলো হলো: নাগরদোলা, দিন যায় কথা থাকে, কথা দিলাম, মাটির পুতুল, সাহেব, ছোট মা, এতিম, ঘরজামাই, সখী তুমি কার ইত্যাদি। এসব সিনেমাই সে সময় ব্যবসা সফল হয়।

চিত্রনায়ক ফারুক এখন অনন্তলোকের যাত্রী। আগামীকাল মঙ্গলবার দেশে আসবে তাঁর মরদেহ- এমনই জানিয়েছেন তাঁর ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ।

চোখের জলে হয়তো ফারুকের বিদায় হবে, কিন্তু ‘চিত্রনায়ক ফারুক’ এর বিদায় হতে পারে না। বাংলা চলচ্চিত্রের যতটা জুড়ে তিনি আছেন তা কখনও মুছে দেওয়া যাবে না। তাই, ‘মিয়া ভাই’কে বিদায় বলতে নেই, বলা যায় না।

Link copied!