রোবটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন হলিউড লেখকরা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৪, ২০২৩, ১২:০৫ এএম

রোবটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন হলিউড লেখকরা!

‘মডার্ন টাইমস’ সিনেমাতে যন্ত্রনির্ভর সভ্যতার প্রতি বিদ্রূপ ঝরে পড়েছে কিংবদন্তি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের কণ্ঠ থেকে। চ্যাপলিন একশ বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যন্ত্র গ্রাস করবে সবকিছু। দানবে পরিণত হবে যন্ত্র। চ্যাপলিনের সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হচ্ছে। যন্ত্র যে এক সময় পৃথিবীর দখল নেবে— সায়েন্স ফিকশনের সেসব গল্প বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। সায়েন্স ফিকশন নিয়ে বছরের পর বছর ধরে লিখেও আসছেন হলিউডের লেখকরা। এখন সেই কুশীলবরাই ভয়ে আছেন, রোবট তাঁদের চাকরি খাবে ব’লে। আর তাই সিনেমা ও টেলিভিশন প্রোগ্রামের স্ক্রিপ্ট লেখার ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের দাবিতে একজোট হয়েছেন হলিউডের টিভি ও সিনেমার লেখকদের সংগঠন ‘রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা’।

একদিকে কমে গেছে বিজ্ঞাপনী আয়, অন্যদিকে কর্ম হারাবার দুশ্চিন্তায় এমনিতেই চাপে রয়েছে হলিউডের স্টুডিওগুলো। তার ওপর স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোকে লাভজনক করার জন্য লড়তে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা বা এআইর মতো প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আপস করতে নারাজ তাঁরা। লেখকদের দাবিকে নাকচ করে স্টুডিওগুলো বলছে, নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে তারা বছরে একবার করে পর্যালোচনা করবেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, হলিউডের সিনেমা ও টেলিভিশনের স্ক্রিপ্ট লেখকদের ধর্মঘট বিরল ঘটনা। তারাই গত সোমবার ১৫ বছরে প্রথমবারের মতো আন্দোলনে নামলেন। ১১ হাজারেরও বেশি সিনেমা ও টেলিভিশন লেখক এদিন ধর্মঘট পালন করেন। ওই ধর্মঘটের কয়েকটা কারণের একটি— এআইয়ের ব্যবহার। তবে মূল কারণ, কম মজুরি প্রদানও। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের আয়ের সাথে স্ট্রিমিং যুগের আয় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

স্টুডিওগুলোর পক্ষে চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রযোজকদের পক্ষে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে চিত্রনাট্যকারদের একজন জন অগাস্ট বলেন, ‘লেখকদের এআই নিয়ে দুটি উদ্বেগ রয়েছে। আমরা চাই না আমাদের লেখা স্ক্রিপ্ট এআইয়ের কাছে দেওয়া হোক, এবং আমরা এটিও চাই না যে এআইয়ের লেখা অগোছালো খসড়াগুলো আমাদের ঠিক করতে হোক।’

ইউনিভার্সিটির মোটাস ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক সেমুর বলেন, সমস্যাটি হচ্ছে, আমরা ভেবেছিলাম সৃজনশীলতাই হলো মানুষের শেষ ঘাঁটি, যা মেশিনগুলোকে কারও চাকরি দখলে নেওয়া থেকে ঠেকিয়ে রাখবে। আমার যুক্তিতে এটি কেবল একধরনের স্বেচ্ছাচারী ধারণা, যা বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করে ফেলেছিল।

এনবিসি’র নাটক ‘আইন ও শৃঙ্খলা: এসভিইউ’ এর নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করা চিত্রনাট্যকার ওয়ারেন লেইট বলেন, এআই যা করতে পারে তা হলো— একটি নোংরা কাজের অংশবিশেষ তৈরি করতে পারে। অন্য কিছু না। 

ওয়ারেন আরও বলেন, ফার্স্ট ড্রাফট তৈরির পরিবর্তে স্টুডিওগুলো সেকেন্ড ড্রাফ্ট তৈরির জন্য লেখক নিয়োগ দেয়, এতে করে কম অর্থ পায় তাঁরা। এই চর্চাকে লেখকেরা ছুড়ে ফেলতে চান। লেখকদের ইউনিয়ন জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটির মতো এআই সিস্টেম দ্বারা তৈরি লেখাকে সাহিত্য বা উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। এই শর্তাবলি তাদের চুক্তিতে পরিষ্কার করে লেখাও আছে।

সূত্র: রয়টার্স

Link copied!