‘মহারাজা তোমারে সেলাম!’

বিনোদন প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৩, ২০২১, ০৭:৪৯ পিএম

‘মহারাজা তোমারে সেলাম!’

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। আজ তার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯২ সালে ২৩ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান প্রতিভাবান এই মানুষটি। সময়ের সাথে নতুন সিনেমা তৈরি হলেও তার শূন্যতা এখনও রয়ে গেছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে।

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী সত্যজিৎ রায় একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক এবং লেখক। তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। তার জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজে খ্যাতনামা রায় পরিবারে।

১৯২১ সালে ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়। তার বাবা লেখক সুকুমার রায় এবং মা সুপ্রভা দেবী। তার পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

ভারতীয় চলচ্চিত্র তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম সত্যজিৎ রায়। তার চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ জন্মায় ১৯৪৯ সালে ফ্রেঞ্চ পরিচালক জঁ রনোয়ার সাথে পরিচয়ের পর এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘দি বাইসাইকেল থিফ’ দেখার পর। জঁ রনোয়ার মূলত ‘দি রিভার’ চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের জন্য কলকাতায় আসেন এবং সেখানে তার সাথে সত্যজিতের পরিচয় হয়। সেই সময়ই সত্যজিৎ রনোয়ারের সাথে ‘পথের পাঁচালী’র চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে কথা বলেন এবং রনোয়ার এ ব্যাপারে তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন।

১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘পথের পাচালি’ - যা সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে পরিগনিত হয়। ছবিটি ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে যার মধ্যে অন্যতম হল কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ডকুমেন্টরি ফিল্ম’ অর্জন।

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সাহিত্যকর্মেও তার অগাধ দক্ষতা ছিল। বাংলা সাহিত্যের রোমাঞ্চকর কিছু গল্প লিখে যান তিনি। ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু, তাড়িনি খুড়ো তার বেশ কিছু অমর চরিত্র। লেখালেখির পাশাপাশি চিত্রনাট্যকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের পাশাপাশি যার কারণে বিশ্বদরবারে বাঙালিকে চেনা যায় তিনি হলেন সত্যজিৎ রায়৷ পাশাপাশি, বাঙালির একমাত্র অস্কার আসে তার হাত ধরেই। চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবেও সুপরিচিত তিনি।

সত্যজিতের নির্দেশনার প্রকৃতি অভিনেতার প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করত। উৎপল দত্তের মত অভিনেতাদের তেমন কোন নির্দেশনাই তিনি দেননি, অন্যদিকে অপু চরিত্রে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিংবা অপর্ণা চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুরকে তিনি অনেকটা "পুতুলের" মত ব্যবহার করেছেন।

তার শ্রেষ্ঠ কিছু কাজের মধ্যে রয়েছে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘অপু ট্রিলোজি’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’, ‘অরন্যের দিনরাত্রি’, ‘দেবী’সহ আরো অনেক। ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় পান ‘বিবিসির শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ (১৩তম) উপাধি। পাশাপাশি, পদ্মভূষণ ও ভারতরত্ন পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি।

১৯৮৩ সালে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর তার কাজের গতি একেবারে কমে আসে। স্বাস্থ্যের অবনতির ফলে ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের সহায়তায় ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ রায় ‘ঘরে বাইরে’ ছবিটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন।

১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ তার বাবা সুকুমার রায়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তার শেষ তিনটি ছবি প্রথম দিকের ছবিগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংলাপ নির্ভর ছিল। ছবিগুলো হচ্ছে ‘গণশত্রু’ (১৯৮৯), ‘শাখাপ্রশাখা’ (১৯৯০) ও আগন্তুক’ (১৯৯১)।

১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে সত্যজিৎ হাসপাতালে ভর্তি হন। তারপর সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তার। ২৩ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান প্রতিভাবান এই মানুষটি। সময়ের সাথে নতুন সিনেমা তৈরি হলেও তার শূন্যতা এখন রয়ে গেছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে।

Link copied!