শক্তি-সামর্থ্য বাড়াতে মিলিটারির দ্বারস্থ পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা

ফাহিম রেজা শোভন

মার্চ ২৭, ২০২৪, ১২:৪০ পিএম

শক্তি-সামর্থ্য বাড়াতে মিলিটারির দ্বারস্থ পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা

পাকিস্তানের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

একটা দেশ, যার পান থেকে চুন খসলেই যেন মিলিটারির কাছে গিয়ে ধর্ণা দিতে হবে।

রাজনৈতিক সমস্যা?

সমাধান কে করবে?  মিলিটারি করবে।

নির্বাচন? প্রধানমন্ত্রী কে হবে বণিবনা হচ্ছে না? চলো চলো আর্মি চীফের বাংলোয় চলো!

কূটনীতি সামলাতে পারছে না? মিলিটারির গোয়েন্দা উইং আই এস আই তো আছেই!

পাকিস্তান নামের দেশটিতে সবকিছুই যখন মিলিটারির কাছে কেন্দ্রীভূত ছিল, মিলিটারিকে কখনই যেচে পড়ে দেশটির ক্রিকেট দলের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায় নি।

অথচ নতুন ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যান এসে এসেই অনুভব করেছেন বাবর আজম, রিজওয়ানদের খেলার মাঠে শক্তি কমে গেছে! তারা মেরে বল গ্যালারিতে পাঠাতে পারছে না। তাই শক্তি ও সামর্থ বৃদ্ধির জন্যে সেনাবাহিনির কাছে বর্গা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা কেমন না?

এমনি এক বিব্রতকর পরিস্তিতির মধ্যে পড়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট।

গেল বছর ভারত বিশ্বকাপে ফিল্ডিং দেখে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দেশটির কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা। এরপর আইপিএল, বিপিএল এর মত পাকিস্তানের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ, যেটাকে পাকিস্তানে বলা হয় পাকিস্তান সুপার লিগ, সেই বিরাট আয়োজনে ছক্কা হাকাতে না পারায় বাবর-রিজওয়ানদের ফিটনেস নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন নতুন পিসিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মহসিন রাজা নাকভি।

তাই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২৯ ক্রিকেটারকে সম্পূর্ণ ফিট করতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছে পাকিস্তান। ২৬ মার্চ থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কাকুলে শুরু হওয়া এই ট্রেনিং শেষ হবে ইদুল ফিতরের আগে ৮ এপ্রিল। কাকুল ক্যাম্পটি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অ্যাবোটাবাদ জেলায় অবস্থিত।

দেশটির মূল দলে খেলা সব তারকা খেলোয়াড়রাই আছেন এই ক্যাম্পে। বাবর, রিজওয়ান, হারিস, শাদাব, শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, ফখর জামান কে নেই এই ‘শক্তিহীন দূর্বল’ খেলোয়াড়দের তালিকায়!

দলের পুরোনো শক্তি মোহাম্মদ আমির অবসর ছেড়ে দলে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে চলে গেছেন আর্মি ক্যাম্পে।

নেটিজেনরা বলছেন, ব্যাপারটা এমন যে, শক্তি চাও? পাঠিয়ে দাও আর্মির কাছে।

পিসিবি চেয়ারম্যান নাকভি বলেন, তিনি যখন লাহোরে বসে পাকিস্তান সুপার লিগের খেলা দেখছিলেন, “আমার মনে হয় না তোমাদের মধ্যে কেউ গ্যালারিতে ছক্কা মেরেছ। ছক্কা যা মারার বিদেশি খেলোয়াড় মেরেছে।”

তিনি এভাবেই নিজ দেশের তারকা খেলোয়াড়দের দূর্বল আখ্যা দিয়ে বসেন। এই বিষয়ে খেলোয়াড়দের পক্ষে কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

স্বাভাবিক!!! যেদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই সেনাদের হাতে কুক্ষিগত রয়েছে সেদেশে সেনা-বিরুদ্ধ কোন মন্তব্য করে কোন বেতনভুক্ত খেলোয়াড় বিব্রত বোধ করতে চাইবেন না।

মূলত ক্রিকেটারদের শারীরিক শক্তি বাড়াতে তাদের মিলিটারি ট্রেনিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে পাকিস্তানি বোর্ড জানিয়েছে। ট্রেনিং শেষে যাচাইবাছাই করা হবে ক্রিকেটারদের ফিটনেস। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণা করবে পাকিস্তান। আগামী ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানে আসবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল।

একবার বিশ্বকাপ জয়ী ও টি২০ বিশ্বকাপ জয়ীদের এমন অপমান প্রথমবার নয়। ২০১৬ তেও একবার এমনটা দেখা গিয়েছিল। সেবার পারফরমেন্স উন্নয়নের লক্ষ্যে মিসবাহ উল হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল কাকুলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এরপর ইংল্যান্ডে গিয়ে তাদের বিপক্ষে ২-২ এ টেস্ট সিরিজ ড্র করেছিল আফ্রিদি, আকরাম, ওয়াকার দের উত্তরসূরিরা। সেখা যাক আর্মির ছোঁয়া পেয়ে এইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটিই ঘরে তোলে কিনা বাবর আজমরা!

Link copied!