বাংলাদেশের ক্রীড়া খাতে বরাদ্ধের চেয়ে ৬০ গুণ বেশি আয় করে স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? চলুন ভেঙে বলে বুঝিয়ে দিচ্ছি-
বাংলাদেশের খেলাধুলা খাতে সরকারের পক্ষ থেকে করা খরচের সবটাই সামলায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খাতে ব্যয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ২১৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
একই সময় বিশ্বের প্রথম ফুটবল ক্লাব হিসেবে ১০০ কোটি ইউরো রাজস্ব আয়ের রেকর্ড গড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। টাকার হিসেবে যার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
বিভিন্ন রেকর্ড ভেঙে নতুন নতুন রেকর্ড গড়া যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব জায়ান্টটির। সম্প্রতি নিজেদের ওয়েবসাইটে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের হিসাব প্রকাশ করেছে রিয়াল। সেখানেই ভিন্ন রকম রেকর্ড সম্বলিত বিশাল আয়ের এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সেই হিসাব অনুযায়ী গেল অর্থবছর বাজেটে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খাতের জন্য বরাদ্দকৃত ব্যয়ের তুলনায় একই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের আয় প্রায় ৬০ গুণ বেশি।
একই অর্থ বছরে বাংলাদেশের বাজেটে বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এই সমন্বিত খাতের মধ্যেই বরাদ্দ থাকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বাজেট। অনেকগুলো খাত মিলিয়ে এই সমন্বিত বাজেটটিও রিয়াল মাদ্রিদের ১ বছরের আয়ের অর্ধেকেরও কম।
এই বছরের বাজেটে অবশ্য ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্যে বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে বাজেট পাশ করা হয়েছে বাংলাদেশের সংসদে।
ফিরে যাওয়া যাক রিয়াল মাদ্রিদের ইস্যুতে। গেল অর্থবছরে সবকিছু মিলিয়ে রিয়ালের আয় ১০৭ কোটি ৩০ লাখ ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তাদের আয় ছিল ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ইউরো (১০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা)।
ইউরোপের ফেভারিট ক্লাবটি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৩০ মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে (সান্তিয়াগো বার্নাব্যু) স্টেডিয়াম পুরোপুরি চালু না হওয়া সত্ত্বেও ক্লাব ১ বিলিয়ন ইউরো পরিচালন আয় করতে সফল হয়েছে। যেকোনো ফুটবল ক্লাবের জন্য এটি একটি নজিরবিহীন পরিসংখ্যান, বলেও উল্লেখ করেছে ক্লাবটি।
অর্থবছর | আয় (ইউরো) |
২০২৩–২৪ | ১০৭ কোটি ৩০ লাখ |
২০২২–২৩ | ৮৪ কোটি ৩০ লাখ |
২০২১–২২ | ৭২ কোটি ২০ লাখ |
২০২০–২১ | ৬৫ কোটি ৩০ লাখ |
২০১৯–২০ | ৭১ কোটি ৫০ লাখ |
গত মৌসুমে কার্লো আনচেলত্তির দল রিয়াল সম্ভাব্য চার শিরোপার তিনটিই জিতেছে। জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপে হয় চ্যাম্পিয়ন। এরপর মে মাসে লা লিগা আর জুনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে রিয়াল।
মাঠে লস ব্লাঙ্কোসদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ক্লাবের অর্থনীতিতেও।
স্প্যানিশ ক্লাবটি তাদের বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, স্পেন সরকারকে কর পরিশোধের পরও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে তাদের লাভ ১ কোটি ৬০ লাখ ইউরো বা ২০৪ কোটি টাকা। সুতরাং, ইউরোপের ক্লাবটির সব খরচ বাদ দিয়ে লাভের পরিমাণই বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেটের কাছাকাছি।
২০২৩–২৪ অর্থ বছরে বিপুল পরিমাণ আয়ের পর গত ৩০ জুন পর্যন্ত রিয়ালের মোট সম্পদের মূল্য প্রতিবছর বাড়তে বাড়তে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ইউরোয় (৭ হাজার ৩২২ কোটি) পৌঁছেছে।
সবশেষ অর্থ বছরে সম্প্রচার ছাড়া রিয়ালের সব ধরনের ব্যবসায়িক পরিধি বেড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মার্চেন্ডাইজিং (বিপণন) ও পৃষ্ঠপোষকতা থেকে আয়। বিশেষ করে জার্সির হাতায় বিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এইচপির লোগো ব্যবহারবিষয়ক চুক্তির পর ক্লাবের উপার্জন লাফিয়ে বেড়েছে।
এ ছাড়া কর রাজস্ব ও সামাজিক নিরাপত্তায় ক্লাবটির অবদান ছিল ২৭ কোটি ৭১ লাখ ইউরো বা ৩ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।