বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা আজ দেশে দেশে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা আজ দেশে দেশে

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালের এই দিনটিতে ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলাভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। আমাদের গর্ব ও অহঙ্কারের একুশের এই দিন বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে।

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে অমর একুশের এই উদযাপন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জাতীয় গৌরব ও সম্মানের। ২০০০ সাল থেকে ইউনেস্কো’র সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

২০০১ সালের ১৫ মার্চ বিশ্বের সব মাতৃভাষার গবেষণা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কাজ করার উদ্যোগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের উপস্থিতিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটি বর্তমানে ভাষাসংক্রান্ত গবেষণা, ভাষা সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এটি ভাষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষা আজ বিশ্বমর্যাদায় আসীন হতে চলেছে। 

একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের তাজা রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাওয়া বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে। মাতৃভাষার সংখ্যার বিচারে বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী ভাষা। 

রাষ্ট্রের দিক দিয়ে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী একমাত্র দেশের নাম বাংলাদেশ। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা প্রদেশ, আসাম প্রদেশের বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রশাসনিক ভাষা বাংলা। ভারত উপমহাদেশের বাইরে একমাত্র আফ্রিকার সিয়েরালিওনে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংসদ বাংলাকে স্বীকৃতির বিল পাস করে। ফলে বাংলা ভাষা লাভ করে এক অনন্য মর্যাদা।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে স্নাতক ও মাস্টার্স পর্যায়ে বাংলা বিভাগ চালু রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর হাজারো অবাঙালি শিক্ষার্থী বাংলাভাষা শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করছেন।

শুধু তাই নয় বাংলাভাষী অনেক লেখক ও দার্শনিকের প্রবন্ধ ও লেখা নিয়ে রীতিমত বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে। চীনা ভাষায় রবীন্দ্র  রচনাবলির ৩৩ খণ্ডের অনুবাদ এবং লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতাটি ইংরেজি, রুশ, চীনা, জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। 

ভারত ও বাংলাদেশের পর বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়ে থাকে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া,  চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষার সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে। যুক্তর্রাষ্ট্রের নিউইর্য়ক,শিকাগো,ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়াসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ১০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও এশীয় গবেষণা কেন্দ্রে বাংলা ভাষার চর্চা উল্লেখেযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের গণমাধ্যমেও বাংলা ভাষার উপস্থিতি রয়েছে। বিশ্বের ৬টি দেশের রাষ্ট্রীয় বেতারে বাংলা ভাষার আলাদা চ্যানেল রয়েছে। শুধু তাই নয়, ১০টির বেশি দেশের রেডিওতে বাংলা ভাষার আলাদা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে ছয়টি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন ও বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। যুক্তরাজ্যে কয়েক ডজন  বাংলা সাপ্তাহিক প্রত্রিকা বের হয়। ‘বেতার বাংলা’ নামে সেখানে একটি বাংলা রেডিও স্টেশনও রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর মধ্যে সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক বাঙালী, সাপ্তাহিক পরিচয়, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক জন্মভূমি, সাপ্তাহিক আজকাল, সাপ্তাহিক প্রবাস, সাপ্তাহিক হককথা, সাপ্তাহিক প্রথম আলো, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিদিন (উত্তর আমেরিকা সংস্করণ), সাপ্তাহিক নবযুগ, সাপ্তাহিক সূর্যোদয়, সাপ্তাহিক মুক্তচিন্তা, পাক্ষিক জেমিনি, পাক্ষিক পরিবর্তন প্রভৃতি নামের বাংলা মিডিয়া নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।

আইপি টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইম টেলিভিশন, টিবিএন২৪, বাংলা টিভি, বাংলা চ্যানেল, এবিটিভি, আইটিভি, চ্যানেল টিটি প্রভৃতি বাংলা ভাষার চ্যানেল সম্প্রচারিত হচ্ছে।

ইউরোপের ইতালিতে বর্তমানে ১০টি বাংলা দৈনিক পত্রিকা এবং রোম ও ভেনিশ শহর থেকে তিনটি রেডিও স্টেশন পরিচালিত হচ্ছে। ইতালি থেকে ছয়টি অনলাইন টেলিভিশন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে শতাধিক ফেসবুক টেলিভিশন চালু  রয়েছে। এছাড়া ডেনমার্ক সুইডেনসহ ইউরোপের আটটি  দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ থেকে বাংলা ভাষার মূদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি এখন সারা বিশ্বের ভাষা ও অধিকারজনিত সংগ্রাম ও মর্যাদার প্রতীক। সারা বিশ্বের বিভিন্ন  দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অহংকার ‘শহীদ মিনার’। একই সাথে বাংলা ভাষার মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে।

Link copied!