সাহস, সক্ষমতা আর সম্মানের প্রতীক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৫, ২০২২, ০৬:০১ এএম

সাহস, সক্ষমতা আর সম্মানের প্রতীক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ

আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। রাত পোহালে শনিবার সকালেই উদ্বোধন বাংলাদেশের সাহস, সক্ষমতা আর অহঙ্কারের প্রতীক বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করবেন।

পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কয়েক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সেতু উদ্বোধনের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। উদ্বোধনের পরদিন (রবিবার) সকালে সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

বিভিন্ন বাধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পুরোপুরি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তার এই সাহসিকতাপূর্ণ পদক্ষেপ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার কোটি কোটি মানুষের জন্য আশির্বাদ।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্লেষকদের ধারণা, পদ্মা সেতুর বদৌলতে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গ হবে মিনি সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। সড়ক মহাসড়কগুলির আধুনিকায়ন হওয়ার পাশপাশি রাজধানী ঢাকার সাথে এ অঞ্চলের নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সেতুর মাধ্যমে খুব দ্রুত, কম খরচ এবং আয়েসে পদ্মার উভয় পারের জেলাগুলোতে ভ্রমণ করা যাবে।

পদ্মা সেতু চালু হলেই ট্যুরিজম সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন পর্যটন বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উম্মুক্ত হলে ওয়াল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। এর ফলে দেশী বিদেশী অনেক পর্যটকের আগমন ঘটবে। এরই ধারাবাহিকতায়  অঞ্চলে ইকো ট্যুরিজম শিল্প গড়ে উঠবে।

মানুষের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হলেই দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২ টি সমুদ্রবন্দর মংলা, পায়রা এবং ২ টি স্থলবন্দর বেনাপোল এবং ভোমরার আধুনিকায়ন, গতিশীল এবং অধিক কার্যকরী হবে। এর ফলে শিল্পোন্নয়নে বিপ্লব ঘটার পাশাপাশি কৃষিতেও বিপ্লব হবে।”

সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আরও যোগ দিচ্ছেন ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মেহমান। বাংলাদেশের জনগণের এই স্বপ্নের  সেতুর  উদ্বোধন উপলক্ষে এরই মধ্যে পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিনন্দন জানিয়েছে।

ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাস থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো এক বার্তায়  দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পদ্মা সেতুকে শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্পের একটি প্রমাণ বলেও তিনি অবহিত করেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের দেওয়া বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসন জানায়, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করবে, বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রসারে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ হলো পদ্মা সেতু বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে একে একে সেতু হয়েছে। মানুষের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। গতি পেয়েছে পণ্য পরিবহন সেক্টর। তবে যোগাযোগ ও পরিবহন ক্ষেত্রে বড় বাধা ছিল পদ্মা পারাপার। এর জন্য ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো মানুষকে, পণ্যবাহী ট্রাককে।

ফেরির অপর নাম ঘাটে ভোগান্তি, ধীরগতির নদী পারাপার, ঘন কুয়াশা, ঝড় ও দুর্যোগে যাত্রা বাতিল  এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় ফেরি অচল। সাধারণত দুই ঈদের ছুটিতে ফেরিতে ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরি পারাপারের ভোগান্তি যুগের অবসান ঘটবে। রবিবার সবার জন্য পদ্মা সেতু চালু হলে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ির ফেরি পারাপার ইতিহাসের পাতায় স্থান নিতে পারে।

Link copied!