ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং অন্য শহর চেরনিহিভ থেকে রাশিয়ান সৈন্যদের একটি অংশ ফিরতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেকসান্ডার মোটুজিয়াঙ্ক জানিয়েছেন, ফিরে যাওয়া রুশদের এই সংখ্যা খুব বেশি নয়।
রাশিয়ার একজন মুখপাত্র ভ্লাদিমির মেডিনস্কি বলেছেন, তুরস্কের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ থেকে রুশ সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে ক্রিমিয়া এবং ডোনবাস ( লুহাস্ক এবং ডোনেস্কের সম্মিলিত নাম) নিয়ে মস্কোর অবস্থান আগের মতই আছে। বুধবার লুহান্সক শহরে ৩৫টির মত কামানোর গোলা নিক্ষেপ করে রাশিয়া।
মারিউপুল বন্দর ছাড়াও ইউক্রেনের পোপাসনা এবং লুহান্সকের রুবিজনেতে রুশদের হামলা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন মোটুজিয়াঙ্ক। তিনি মনে করেন, পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনের সৈন্যদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলতে চাইছে রুশরা। ইউক্রেনের বিপক্ষে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের ১৬ হাজার সৈন্যকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েছে রাশিয়া। বিবিসি জানিয়েছে, সিরিয়ান একেক সৈন্যকে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে মাসে ৫ হাজার ডলার করে দিচ্ছে মস্কো। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। হামলার পর শুরুতে আক্রামানাত্বক থাকলেও এখন নতুন কৌশল নিতে দেখা গেছে রুশদের। আক্রমানাত্বক হওয়ার পরিবর্তে বেশি করে রক্ষনাত্বক কায়দায় যুদ্ধ করছে তারা। রাজধানী কিয়েভের আশপাশে জড়ো হয়ে তাই অনেকটাই চুপচাপই যুদ্ধ পরিকল্পনা করছেন রুশরা। তবে এখন ইউক্রেনের পূর্বের দিকেই বেশি নজর রয়েছে পুতিনের। ডোনবাস শহরকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেখানে রুশ হামলা জোরদার করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের অংশ ক্রিমিয়াকে রাশিয়া দখল করে। এরপর থেকে ইউক্রেনের আরেকটি অংশ ডোনবাসের অধিকাংশ নাগরিকও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে বিক্ষোভ করে আসছে।
ওদিকে ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য ভিসা দিতে শুরু করেছে ব্রিটিশরা। ইউক্রেনের জন্য বিশেষভাবে দেওয়া এই ভিসা সুবিধার আওতায় ২ হাজার ৭শ ভিসা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। ভিসার জন্য এখন পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে ২৮ হাজার ৩শ। ১৪ মার্চ থেকে ভিসা দেওয়ার এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। তবে রেড ক্রস মনে করে মানবেতর জীবনযাপন করা ইউক্রেনিয়ানদের সহায়তার জন্য সবথেকে ভালো ব্যবস্থা হচ্ছে এই মুহূর্তে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেওয়া।
কারণ ভিসা করতে গেলে শরনার্থীদের অন্যান্য দেশের সঙ্গে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে। এতে সংকট আরও ঘনিভূত হবে। ফলে কার্যত যে সাহায্য করার ইচ্ছা যুক্তরাজ্য প্রশন করেছে তা আসলে ব্যাহত হবে।
এখন পর্যন্ত পোল্যান্ড, রোমানিয়া, মালদোভা, হাঙ্গেরী, রাশিয়া, স্লোভাকিয়া, বেলারুশসহ আশপাশের দেশগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ ইউক্রেনের বাসিন্দা গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বসতবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় নেমেছেন ৬০ লাখেরও বেশি নাগরিক। বলা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরনার্থী সংকট। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে রুশ হামলায় ১ হাজার ১শ ৮৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটসের প্রধান মিশেল বেচলেট । যার মধ্যে ৯৮টি শিশু রয়েছে। তবে বাস্তব সংখ্যা এর থেকেও বেশি হতে পারে।
বেচলেট জানান, বেসামরিক নাগরিকরা অমানবিক জীবনযাপন করছে এবং ইউক্রেনের মানবিক সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে রুশ হামলা বড় ধরণের উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এবং এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন বেচলেট। জাতিসংঘে নতুন রিপোর্টে বেচলেট এসব তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষেপনাস্ত্র, কামানের গোলা, রকেট হামলা এবং বিমানবাহিনীর হামলায় যেন এক ধরণের ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে কিয়েভ,মারিউপুলসহ ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা। বেচলেট তার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা ক্লাচটার বোমার ব্যবহারও করেছে রাশিয়া। হামলা শুরুর পর কমপক্ষে ২৪ বার এই বোমার ব্যবহার রুশ সৈন্যরা করেছেন। এ ধরণের বোমা সাধারণত বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক এলাকাজুড়ে মানবদেহের ক্ষতি সাধন করে। বেচলেট আরও জানান, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ৫০টি হাসপাতালে রুশ সৈন্যরা হামলা করেছে। এর মধ্যে ১০টি হাসপাতালের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রকৃত সংখ্যা এর থেকে আরও বেশি হতে পারে। আন্তর্জাতিক আইনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এলোপাতাড়ি হামলা চালানোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে কিনা তা যদিও জাতিসংঘ নির্ধারণ করেনা; করে থাকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। যেখানে এরইমধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।