নভেম্বর ৮, ২০২১, ০৪:০৯ পিএম
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৭ সালে গুম-খুন, ফাঁসি, কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুতির ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে মনাববন্ধন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ মানববন্ধন শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাদের রোষানলে পড়েন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। বিনা বিচারে জিয়ার রোষানলে প্রাণ হারানোর বিষয়েও সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সেসময় হত্যা-খুনের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন প্রয়োজন বলেও তিনি মত দেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৭ সালে ক্যু এর নামে গর্বিত সদস্যদের কোর্ট মার্শাল ও কোর্ট মার্শাল ছাড়াই বিনা বিচারে হত্যা করার করুণ কাহিনী আমরা শুনলাম। শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে আবেগে আপ্লুত। ফাঁসি দেওয়ার পর লাশটাও পরিবারের কাছে দেয়নি। ফাঁসি হয়েছে না গুম হয়েছে- কোনো তথ্যই বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যদের জানা নেই।’
দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা, যুদ্ধাপরাধী ও জেলা হত্যার বিচার হতে পারলে, বিমান বাহিনীর সদস্যদের হত্যার বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি তাদের পরামর্শ দেই, তারা যদি তাদের বক্তব্য লিখিতভাবে দেন তবে কীভাবে বিচার হয়েছে, কী অভিযোগ ছিল, সেই সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করবো। এরপর জাতির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই।’
তিনি বলেন, ‘একটা তদন্ত কমিশন করে এর একটা বিচার হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর করবো। তাকে অবহিত করবো। আইনানুগভাবে কী করা যায় তা দেখবো। ওনারা জিয়াউর রহমানের নাম বলছেন, তার দায়-দায়িত্ব কতটুকু ছিল, তিনি কী ভূমিকা পালন করেছেন তা খতিয়ে দেখা হবে।’
এর আগে, মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে তাদের সন্তানরা বলেন, ‘আমাদের পিতারা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে একটি অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। পরে তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে একদিনের সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ফাঁসি সম্পন্ন করেন ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে।’
অভিযোগ করে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা আরও বলেন ‘রাতের আঁধারে কারফিউ দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হতো। সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনালের কথিত বিচারে ফাঁসি হওয়া ১৯৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু ওই ঘটনার জেরে মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৪৩ জন এবং কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন সেনা ও বিমান বাহিনীর আড়াই হাজার সদস্য।’
তারা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনজীবী নিয়োগের কোনও সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ এই মানুষগুলোকে ন্যায়বিচারের অধিকার ছিল। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে দীর্ঘদিন পরিবারগুলোর কাছে এই তথ্য অজানা ছিল। আমরা জানি না কোথায় তাদের কবর।’
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মো. কামরুজ্জামান মিঞা বলেন, ‘খুন-গুম হওয়া অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব তাদের তালিকা প্রকাশ করা। যদি ১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই তালিকা প্রকাশ করা না হয়, তাহলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবো। প্রয়োজনে লাগাতার ৭ দিন অবরোধ কর্মসূচি দেবো।’