মে ৯, ২০২১, ০৯:২১ পিএম
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রতিদিনের মৃত্যু মিছিলে যোগ হচ্ছে চার হাজারের বেশি মৃতদেহ। সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও একই সাথে বেড়ে চলেছে। দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
এমন সময় ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনার নতুন ভারতীয় ধরন। ভারতে পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের এই ধরন নিয়ে জনগণের মনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আর এই উদ্বেগ বহুগুনে বেড়ে গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একব শীর্ষ বিজ্ঞানী ও গবেষকের করোনার ভারতীয় ধরন সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শীর্ষ বিজ্ঞানী ও গবেষক সৌম্য স্বামীনাথান বার্তা সংস্থা এএফপি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ভারতীয় নতুন ধরনের করোনাভাইরাস পূর্বসূরী প্রচলিত ভাইরাসের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। এর প্রভাবে বাজারে প্রচলিত করোনা টিকাগুলো অকার্যকর প্রমাণিত হতে পারে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকাদান কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন সৌম্য স্বামীনাথান।
ডব্লিউএইচও’র এই গবেষক বলেন, ভারতে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন বি.১.৬১৭ প্রচলিত ভাইরাসটির তুলনায় অনেক বেশি সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বেশ বিপজ্জনক। সার্স-কোভ-২ বা প্রচলিত করোনাভাইরাসের কয়েকবার অভিযোজনের (মিউটেশন) পর এসেছে এটি।
সৌম্য স্বামীনাথান আরও বলেন, ‘বি.১.৬১৭ প্রচলিত ভাইরাস সার্স-কোভ-২ এর তুলনায় অত্যন্ত দ্রুত ও বেশিসংখ্যক মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। এমনকি টিকা নেওয়ার পর শরীরে যে করোনা প্রতিরোধী শক্তি জন্মায়, তাকেও ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা আছে এই ধরনটির।’
করোনাভাইরাসের মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় এমনই নাকাল অবস্থা ভারতে। দিনে দিনে বাড়ছে রোগী, বাড়ছে মৃত্যু।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানায়, রবিবার (৯ মে) গত ২৪ ঘন্টায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ হাজার ৯২ জন। এনিয়ে দেশটিতে এপর্যন্ত মোট মারা গেলেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৬২জন। রবিবার আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়ে যায় চার লাখের বেশি। রবিবার গত ২৪ ঘন্টায় দেশটিতে মোট ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৩৮জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এনিয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত ২ কোটি ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ জন করোনার রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।
দেশটির শ্মশানে দিন-রাত জ্বলছে চিতা। হাসপাতালে শয্যার সংকট, অক্সিজেন সংকটসহ নানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এমন সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই গবেষকের আশঙ্কায় ভারত সরকারের চিন্তা আরও বেড়ে গেলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান করোনার ভারতীয় ধরন সম্পর্কে যে আশঙ্কার কথা বলেছেন, এর আগে অন্য কোনো গবেষক এ বিষয়ে বলেননি।
ওই সময় কোনো গবেষক বলেননি- ভাইরাসের ভারতীয় ওই ধরনটি আরও বেশি সংক্রামক কি না। এমনকি করোনার যে টিকাগুলো দেশে দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো এই ধরনের বিরুদ্ধে কার্য কর কি না, তাও স্পষ্ট করা হয়নি আগে
তবে যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জেরেমি কামিল বিবিসিকে বলেছিলেন, ভারতে করোনাভাইরাসের যে পরিবর্তনগুলো ঘটেছে, তার মধ্যে দুটি পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে একটি পরিবর্তনের পর ভাইরাসটির প্রকৃতি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের ধরনের সঙ্গে মিলে যায়। এই ধরনটি শরীরে করোনার বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হলেও হতে পারে।’
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভাইরাসের নতুন ধরনটি কতটা ছড়িয়েছে, তা নির্ণয়ে ভারতে বড় পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো হয়নি। তবে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি নমুনার মধ্যে ২২০টিতেই নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।
করোনার ভারতীয় ধরনের ব্যাপারে বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জিআইএসএআইডি সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনটি এরই মধ্যে অন্তত ২১টি দেশে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যে ১০৩ জনের শরীরে নতুন ওই ধরনটি পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনটিকে ‘অনুসন্ধানের আওতায় থাকা ধরন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে এই ধরনকে এখনো বিপজ্জনক বা উদ্বেগজনক হিসেবে ঘোষণা করেনি তারা।