সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ০৯:১৫ এএম
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এখনও না হওয়াকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে এ ব্যাপারে ভারতকে আরও উদারতা দেখাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফর শুরু করার আগে ভারতীয় গণমাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’কে (এএনআই) দেওয়া সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই। এই সাক্ষাতকারটি গতকাল রবিবার এএনআই প্রকাশ করে।
সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক যে, এখনও এটি ঝুলে আছে। আমাদের এখানে ভারত থেকে পানি আসে, তাই ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে। কারণ, এতে উভয় দেশই লাভবান হবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “পানির অভাবে আমাদের জনগণও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তায় পানি না পেয়ে আমরা ফসল রোপণ করতে পারিনি এবং আরও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আমি মনে করি এর সমাধান হওয়া উচিত।”
এসময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমরা অবশ্য দেখেছি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যাটি সমাধাসে আগ্রহী। কিন্তু সমস্যাটি আপনাদের দেশেই। তবু আমরা আশা করি এটি সমাধান হবে এবং এটি সমাধান করা উচিত।”
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে আলোচনার মাধ্যমে এগুলোর সমাধান সম্ভব। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রেই ভারত ও বাংলাদেশ সেটিই করেছে।
এ সময় ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে সেখানে আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের ফেরাতে ভারতের সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারি রোধে টিকা দিয়ে মোদি সরকারের সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সাক্ষাতকারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি উঠে আসে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার এখন নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। এই সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশী ভারত মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিকটি বিবেচনা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার যত্ন নিচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, “বর্তমানে রোহিঙ্গার আমাদের জন্য বড় একটি বোঝা। ভারত বড় একটি দেশ, সেখানে থাকার জায়গা অনেক হলেও কিন্তু দেশটিতে খুব বেশি রোহিঙ্গা নেই। আর আমাদের দেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ে আছে। এই সমস্যাটি সমাধানে ভারত ভূমিকা রাখতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিই। তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে করোনা মহামারির সময়ে টিকার আওতায় এনেছি। কিন্তু তারা আর কতদিন এখানে থাকবে? তারা এখন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। আমাদের পরিবেশকে বিপজ্জনক করে তুলছে।
সাক্ষাতকারে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য নদীর বিষয় স্থান পায়। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “দুই দেশ গঙ্গা নদীর পানি ভাগ করে নিয়েছে। কিন্তু শুধু গঙ্গার পানিই আমরা ভাগাভাগি করেছি। এই পানির বিষয়ে আমরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আমাদের আরও ৫৪টি নদী আছে। এগুলো নিঃসন্দেহে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, তাই এসবের সমাধান হওয়া উচিত। “
সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত থেকে আসা গরুর উপর বাংলাদেশ নির্ভর করে না। গরু পাচারের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। আমি নিশ্চিত করে বলছি, পাচার বন্ধ হবে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি আলোচনা করবও। তবে ভারতকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।”
সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতেও বাংলাদেশে র অর্থনীতি তুলনামূলক ভাল অবস্থানে রয়েছে।”
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, “সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেকটা ভাল। কোনো প্রকল্প থেকে কী লাভ হবে তা নিশ্চিত হয়েই বাংলাদেশ ঋণ নেয় বলেও সাক্ষাতকারে জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হ্যা এমন অনেকে আছেন যারা এই প্রশ্ন তোলেন যে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। তবে আমি আশ্বস্ত করতে পারি যে তেমন কিছু হবে না। কারণ আমরা অঅমাদের সব পরিকল্পনা, যা আমরা তৈরি ও বাস্তবায়ন করি, সবসময় আমরা দেখি এর থেকে কী লাভ হবে? কীভাবে মানুষ লাভবান হবে? তা না হলে কেবল টাকা ব্যয় করার জন্য আমি কোনো প্রকল্প নেই না।”