গত তিন বারের ধারাবাহিকতায় চ্যাম্পিয়ন দল এবারও কি প্রথম রাউন্ডে বিদায়?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২১, ২০২২, ০৭:৩৯ পিএম

গত তিন বারের ধারাবাহিকতায় চ্যাম্পিয়ন দল এবারও কি প্রথম রাউন্ডে বিদায়?

বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) কাতারে মাঠে নামতে যাচ্ছে ফ্রান্স। সকারুদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ইনজুরি শঙ্কা বেশ ভাবনায় ফেলে দিয়েছে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশ্যমকে। অনুশীলনকালে চোট পেয়ে পুরোনো চোট জেগে ওঠায় সদ্যই দল থেকে ছিটকে গেছেন এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী করিম বেনজেমা। কাতারের স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে জসিম বিন হাম্মাদ স্টেডিয়ামে দলের সঙ্গে অনুশীলন করার সময় উরুর ইনজুরিতে পড়েন তিনি। 

ইনজুরি, সাম্প্রতিক ফলাফল ও মাঠের বাইরের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ফরাসি দলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শিরোপাটা ধরে রাখা ফ্রান্সের জন্য কতটা সম্ভব দল ও সমর্থকদের মনে তা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। অনেকে তো ভাবছেন ফ্রান্স এই দল নিয়ে গ্রুপ পর্বই পেরুতে পারবে কি না!

গত বছর দলের পারফরম্যান্সে বেশ চড়াই উৎরাই লক্ষ্য করা গেছে। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ ১৬’তে সুইজারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে হেরে বিদায় নেয়া দলটি উয়েফা নেশন্স লিগ জিতে কিছুটা হলেও পাপ মোচন করেছে। এ কারণে লেস ব্লিউসদের নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে তেমন একটা আলোচনা শোনা যাচ্ছে না। 

শেষ ছয়টি ম্যাচের মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে দেশ্যমের শিষ্যরা। এর মধ্যে ডেনমার্কের বিপক্ষে দুটি পরাজয় দলকে নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। কারণ বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডেনমার্ক। 

ন্যাশন্স লিগের ম্যাচগুলোতে শীর্ষ ইউরোপিয়ান দল হিসেবে শুধুমাত্র ফ্রান্সই বিপাকে পড়েনি, অন্য আরও বেশ কিছু দলই এই তালিকায় রয়েছে। 

তবে সব ছাপিয়ে ফ্রান্সের সামনে এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় ইনজুরি। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ে অবদান রাখা মধ্যমাঠের দুই মূল কান্ডারি এন’গোলো কান্তে ও পল পগবার কেউই থাকছেন না বিশ্বকাপে। চেলসির কান্তে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির সাথে লড়াই করছেন। গেল বুধবার অনুশীলনের সময় ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গেছেন তাদের ফরোয়ার্ড ক্রিস্টোফার এনকুকু। এবার ইনজুরিতে পড়লেন বেনজেমা। 

হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে চলতি মৌসুমে এখনো জুভেন্টাসের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি পগবা। আগামী সপ্তাহে দেশ্যমের দলে পগবার ফেরার আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে গ্রীষ্মে তুরিনের জায়ান্ট ক্লাবে যোগ দেয়ার পর নিজেকে কোনোভাবেই ফিট করে তুলতে পারছেন না পগবা। 

ফরাসি অধিনায়ক হুগো লোরিস স্বীকার করেছেন পগবার দলে থাকাটা জরুরি ছিল। এই দুই মিডফিল্ডার মিলে ১৪৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। তাদের অনুপস্থিতি ফ্রান্সের মধ্যমাঠে বিশাল একটি শুন্যতার সৃষ্টি করবে। এই অভাব পূরণে রিয়াল মাদ্রিদের অরেলিয়েন টিচুয়ামেনি ও জুভেন্টাসের আদ্রিয়েন রাবোয়িতকে ফেবারিট মানা হচ্ছে। 

ইনজুরির তালিকায় আরও রয়েছেন সেন্টার-ব্যাক রাফায়েল ভারানে। তবে বিশ্বকাপের আগে তার ফেরার আশা করছেন দেশ্যম। 

বিশ্বকাপ ফাইনালের একদিন পরে ৩৫ বছরে পা রাখতে যাওয়া বেনজেমার সাম্প্রতিক ফর্ম দলকে উজ্জীবিত করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি খেলতে পারছেন না। ফ্রান্সের হয়ে ৯৭ ম্যাচ খেলে ৩৭টি গোল করেছেন এই তারকা ফুটবলার। বিশ্বকাপে খেলতে পারলে দলের হয়ে শততম ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করতে পারতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। খেলা হচ্ছে না বিশ্বকাপে। এ নিয়ে টানা তিন বিশ্বকাপে খেলতে পারলেন না রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা।

এ বছরটি দুর্দান্ত কেটেছে করিম বেনজেমার। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার পাশাপাশি স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপাও জিতেছিলেন। জিতেছিলেন ২০২২ ব্যালন ডি’অরও। ২০২১-২২ মৌসুমে রিয়ালের হয়ে ৪৬ ম্যাচে করেছিলেন ৪৪ গোল। শুধু তাই নয়, ফ্রান্সের হয়ে ন্যাশন্স লিগেও দারুণ পারফরম্যান্স করেছিলেন তিনি। সবাই ধরেই নিয়েছিল ফরাসি এই তারকা এবার কাতার বিশ্বকাপ রাঙাবেন নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না অনাহুত ইনজুরির কারণে।

বেনজেমার বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রান্স কাকে নিবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার পর্যন্ত সময় রয়েছে তাদের হাতে।

এই মুহূর্তে মূল একাদশে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে অলিভার গিরুদের। যদিও এসি মিলানের হয়ে দারুণ ফর্মে রয়েছেন গিরুদ। আঁতোয়ান গ্রিজম্যান, ওসমানে ডেম্বেলে ও কিংসলে কোম্যান প্রত্যেকেই বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড। 

গত মৌসুমে বুন্দেসলিগার সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ক্রিস্টোফার এনকুকু। ইনজুরিতে পড়ে তিনিও শেষ মুহূর্তে দল থেকে ছিটকে গেছেন। 

এরপর এমবাপ্পে তো রয়েছেনই। পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে ২০১৮ সালে ফাইনালে এমবাপ্পে গোল করেছিলেন। এমবাপ্পের জ্বলে ওঠার দিনটি প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক হয় না।

এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্স রয়েছে গ্রুপ ‘ডি’ তে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও তিউনিসিয়া। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ মিশন। এরপর ২৬ নভেম্বর রাত ১০টায় ডেনমার্কের মুখোমুখি হবে ফরাসিরা। আর ৩০ নভেম্বর রাত ৯টায় শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ তিউনিসিয়া।

পেরুকে প্লে-অফে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কোচ গ্র্যাহাম আর্নল্ড প্লে-অফের ফাইনালে ১২০ মিনিটে ম্যাথিউ ডেভিড রায়ানের স্থানে বদলি গোলরক্ষক এ্যান্ড্রু রেডমায়নের উপর আস্থা রেখেছিলেন। আর এই রেডমায়নের উপর ভর করেই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে পৌঁছে যায়। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নাম লিখিয়েছে তারা। আগের তিন আসরেই গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়া অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে গত ৯টি ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ের দেখা পেয়েছে। ২০১০ সালে সার্বিয়ার বিপক্ষে তারা ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল। বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডকে দুটি ম্যাচেই পরাজিত করেছে। 

চার বছর আগেও গ্রুপ পর্বে একে অপরের মোকাবেলা করেছিল ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া। আঁতোয়ান গ্রিজম্যানের পেনাল্টি ও আজিজ বেহিচের আত্মঘাতী গোলে ফ্রান্স ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল। এর আগের পাঁচবারের মোকাবেলায় সকারুজরা ২০০১ কনফেডারেন্স কাপে একমাত্র জয় পেয়েছিল।

Link copied!