খুনোখুনির অস্বস্তি নিয়েই দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১১, ২০২১, ০১:০৯ এএম

খুনোখুনির অস্বস্তি নিয়েই দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচন

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় গোলযোগ আর সহিংসতার মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে খুন ও সহিংসতায় অস্বস্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বাড়তি কোন ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। এদিকে চলতি বছরে নির্বাচনী সহিংসতায় ৪১ জনই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী বলে জানা যায়।

নির্বাচন হলেই খুনোখুনি

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৪৬৯টি নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ছয় হাজার ৪৮ জন এবং নিহত হয়েছেন ৮৫ জন।

নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪১ জন, বিএনপির ২ জন, সাধারণ মানুষ ২২ জন, পুলিশের গুলিতে ১৫ জন এবং একজন সাংবাদিক মারা গেছেন।শুধু চেয়ারম্যান প্রার্থী নয়, সদস্য প্রার্থী নিয়েও ঘটছে খুনোখুনির ঘটনা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার ও রেষারেষির জেরেই এসব বেশি ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সংঘর্ষে বেশি জড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ

আসকের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটেছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এ পর্যন্ত ২৯৮টি সহিংসতার ঘটনাই ঘটেছে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে। এ ছাড়া পৌর নির্বাচনকে ঘিরে ১১টি, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছয়টি ও বাকিগুলো অন্যান্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। এসব সহিংসতার মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষই বেশি। দলটিতে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ হয়েছে ৬৯ বার। এ ছাড়া অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলোও সহিংসতায় জড়িয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়েছে মাত্র ছয়বার।

সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনে। এ সময়ে ৯৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ছিল ৮৮টি। এই ক’দিনের সহিংসতায় আওয়ামী লীগের সাতজন এবং চারজন সাধারণ মানুষ মারা গেছেন।

আওয়ামী লীগের মতে আগামীতে সহিংসতা কমবে

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ইউনিয়নে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় মনোনয়নের পর অনেকেই অভিমান করে। কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে বিএনপি-জামায়াত ইন্ধন দেয়। আমরা সব দেখছি, তদন্ত করছি। আমাদের সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছে সেখানে আমরা যোগাযোগ করি। তিনি অনুরোধ না রাখলে শোকজ করা হয়। সন্তোষজনক উত্তর না দিতে পারলে তাকে বহিষ্কারও করা হয়। আমি মনে করি, আরও কয়েকটা নির্বাচন হলে এসব সমস্যা থাকবে না।

ভঙ্গুর নির্বাচন ব্যবস্থা মতামত বিএনপির

নির্বাচনি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সার্বিক নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। যেহেতু নির্বাচন কমিশনার সম্পূর্ণ ব্যর্থ, প্রশাসনও অনুরূপ অবস্থানে আছে। স্বাভাবিক কারণে যেখানে আইন, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন সব একাকার—সেখানে তো বিপক্ষ প্রার্থী যেকোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন।

ব্যক্তি স্বার্থ কেন্দ্রিক নির্বাচন মূল কারন

নির্বাচনি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন ব্যক্তির স্বার্থে রাজনীতি হচ্ছে। মনোনয়ন বা নির্বাচন হলেই লাভ। দ্রুত ধনী হওয়া যায়। পরিবার-স্বজনদের সুবিধা দেওয়া যায়। তাই রাজনীতিবিদরা মরিয়া হয়ে উঠেছে এসব পদের জন্য। তারা গ্রুপ হয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। নির্বাচন, জনপ্রতিনিধি কোনটিই এখন মানুষের জন্য নেই।

Link copied!