কারওয়ান বাজারে ঢুকতেই বিপাকে পরলো জুয়েল আহমেদ। ডিএনসিসি মার্কেটের নীচতলার কোন দোকানে সয়াবিন তেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় তলায় দোকানে তেল থাকলেও তা শিকল দিয়ে বাঁধা। সব তেল আগেই বিক্রি হয়েছে বললো জানায় দোকানদার।বাড়তি পরামর্শ এল সরিষার তেল নিয়ে যাওয়ার।
তবে শুধু দোকানে নয় অনলাইন বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতেই নেই সয়াবিন তেল। চালডাল, পান্ডামার্ট, মিনাক্লিকের মত অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বোতলজাত সয়াবিনের খোঁজ নেই। চালডালে শুধু পলিব্যাগের সয়াবিন পাওয়া গেল- তাও এক লিটারের বেশি দেবে না বলে জানাল কর্তৃপক্ষ। অনেকেই বাধ্যহয়ে দেড়গুণ দামে সরিষার তেল ও সূর্যমুখী তেল কিনছে সয়াবিনের প্রায় দ্বিগুণ দামে।
নিয়ন্ত্রণে নেই তেলের দাম
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার পর দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেল আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে কর তুলে নিয়েছে সরকার। রোজার মধ্যে প্রতিলিটার সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বোতলজাত সয়াবিন তেল এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৪০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়।
মুদি দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতি লিটার ২০০ টাকারও বেশি দামে তেল কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। ফলে তারা বিক্রি করছেন এরচেয়ে বেশি দামে।
যদিও ভোজ্যেতল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তারা আগের মতই সরবরাহ করছেন। মাঝপথে কোথাও ‘গরবড়’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা। তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল প্রস্তুতকারক সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা দাবি করেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা সরবরাহ করছেন। তাদের দিক থেকে কোনো ঝামেলা নেই।
ঈদের পর দাম বাড়তে পারে- এই কারণে তেল দেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ঈদের পর দর নির্ধারণের বিষয়ে এখনই বলার সুযোগ নেই।
ফ্রেশ ব্র্যান্ডের তেল উৎপাদনকারী মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি অ্যাডভাইজার শফিউর রহমানও একই দাবি করেন। তিনি বলেন, মিল থেকে সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এর পরেও কোথায় কী কারণে তেলের সঙ্কট হচ্ছে সরকারই সেটা খুঁজে বের করবে।
খুচরায় একেবারে উধাও
কারওয়ান বাজারের খুচরা মহসিন ইসলাম বলেন, তিনি খোলা সয়াবিন তেল প্রতি ড্রাম ৩৭ হাজার ও পাম তেল ৩৫ হাজার টাকা করে কিনে এসেছেন। কিছু পরিচিত ক্রেতাকে এই ঈদের বাজারে স্বস্তি দিতে বেশি দামে কিনে এনেছেন। এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের ক্রয়মূল্য ১৮১ টাকা ও পাম তেলের ক্রয় মূল্য ১৭১ টাকা করে পড়েছে।
“পাইকারি বিক্রেতারা কোনো পাকা রশিদ দিচ্ছে না। পাকা রসিদ চাইলে তেল বিক্রি করতেও রাজি হচ্ছে না। টাকা নিচ্ছে এক দোকান থেকে তেল দিচ্ছে দূরে আরেক দোকান থেকে। কিছুই বুঝতে পারছি না।”
ভোক্তা অধিকারের অভিযান
ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গত কয়েকমাস ধরে ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দিয়ে কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।সোমবার সরকারি এ সংস্থা অভিযান চালিয়েছে কারওয়ান বাজারে। ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুইটি তেলের দোকানে অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেখানে দেখা যায় দোকানে তেল থাকার পরেও বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছে না।
কেনো বিক্রি করছে না জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, সব তেল বিক্রি হয়ে গেছে। এখন শুধু ডেলিভারি দেয়া হবে। তাই দোকানে রয়েছে। এতো তেল কারা নিচ্ছে জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান সব তেল বিভিন্ন হোটেল মালিকরা কাল রাতেই কিনে ফেলেছে।
অভিযান শেষে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানা বলেন, ”আমরা প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আজকে শেষ রমজানে আমরা যেটি দেখেছি তেলের বাজারের প্রায় সব দোকানেই তেলের সরবরাহ রয়েছে। তেলের যে সংকট রয়েছিলো অনেকাংশেই দূর হয়েছে। আমরা কিছু দোকানে দেখি তারা তেল না দিয়ে দাম বাড়ানোর একটা কারসাজি করতে চেয়েছিলো। তখন আমরা তাদের হাতে-নাতে ধরে সাথে সাথে জরিমানা করে শাস্তির আওতায় আনা হয়। আমরা শুধু কারওয়ান বাজার না সব বাজারেই আমাদের তদারকি অব্যাহত রাখছি”।