আগস্ট ২৩, ২০২১, ০৮:০৩ পিএম
তিন বছরেই শেষ হবার কথা ছিল উত্তরা আদর্শ শহর প্রকল্পের। কিন্তু তিনদফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেলেও আরও একবছর মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উত্তরায় লেক জটিলতার অজুহাতে ২২ বছরেও আটকে আছে উত্তরা আদর্শ শহর (তৃতীয় পর্ব) প্রকল্প বাস্তবায়ন। প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৯২ শতাংশ হওয়ায় শতভাগ কাজ শেষ করতে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা পর্যালোচনা করা হয়। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
লেক খনন নিয়ে জটিলতা
সভায় আলোচনার শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ একাধিকবার বৃদ্ধি এবং প্রকল্প সমাপ্ত না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্প এলাকায় ঢাকা ওয়াসার সাথে লেক নম্বর ১ ও ৪ এ সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় লেক খননের কাজটি সম্পাদন করা সম্ভব যাচ্ছে না। সেইসঙ্গে প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের অনুমোদিত ব্যয়ের মধ্যে আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় করা না হলে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা সম্ভব হবে না।
ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের বিরোধ
পিএসসি সভায় বিস্তারিত আলোচনা পর এ প্রকল্প এলাকায় লেক নম্বর ১ ও ৪ এর সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য দ্রুত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে সভায় একমত হয় বৈঠকে উপস্থিত সবাই।
১৯৯৯ সালে নেয়া হয় প্রকল্প
প্রকল্পটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে মোট ২ হাজার ৪৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের জুলাই হতে ২০০২ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয় একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। এরপর প্রকল্পটি দুইবার সংশোধন করা হয়। দ্বিতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় মোট ২ হাজার ৩১৬ কোটি ৩৮ লাখ ৪ হাজার টাকা। ওই সময় বাস্তবায়নকাল ১৯৯৯ সালের জুলাই হতে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এতেও শেষ হয়নি প্রকল্পটির বাস্তবায়ন। ফলে বিভিন্ন সময় ধাপে ধাপে ৯ দফায় প্রকল্পের মেয়াদকাল বাড়ানো হয়। তবে দ্বিতীয় সংশোধনীর পর থেকে মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়নি। সবশেষে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু একই অবস্থা হয় এবারও। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ১০ম বার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর্থিক অগ্রগতি আরও কম
পিএসসি সভায় প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ, এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে মোট ১ হাজার ৯৩৬ কোটি ৫৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। তবে আর্থিক অগ্রগতির চেয়ে বেশি হয়েছে বাস্তব অগ্রগতি। প্রকল্পটির বাস্তব ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশ।