দরিদ্র নগরবাসীদের জন্য মানসম্মত প্রাথমিক স্বাথ্যসেবা ও নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নেয়া প্রকল্পে প্রভাবশালীরদের চাপে স্বচ্ছলদের সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। ‘আরবান হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি’ প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে জনবলের ঘাটতি, পর্যাপ্ত বেতন-ভাতার অভাব, চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এনজিওদের জনবলের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব এবং চুক্তির বাইরে কাজসহ রয়েছে নানা দুর্বল দিক। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরীক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবায় নেয়া প্রকল্প
শহরাঞ্চলের বিত্তবান জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও দরিদ্র, বিত্তহীন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। তাদের এই চাহিদা পূরণ করতে এক হাজার ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া হয় ‘আরবান হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট’ (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৪০ কোটি এবং এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৮৯৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপে পড়ে ফ্রি চিকিৎসা ও সিজার করা হয়। যার ফলে প্রকল্পের আওতায় বিশেষ লাল কার্ড না থাকার পরও তাদের সেবা দিতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা।
কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বাস্তবায়ন হয়নি
প্রকল্পের পণ্য, কাজ ও সেবা সংগ্রহে ব্যর্থতার কারনে প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হবার ৩ বছর পরও পণ্য ও সেবা সংক্রান্ত ক্রয় করা যায়নি। এছাড়া এনজিও বদলানোর ফলে প্রথমে দেয়া প্রশিক্ষণ বর্তমানে কাজে আসছে না।
ঝুঁকিপূর্ণভাবে হচ্ছে সিজার
গর্ভবতী মায়েদের জরুরি সিজারের সময় দক্ষ অ্যানাস্থেসিওলজিস্টের অভাব রয়েছে। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই সিজার করা হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে সেবা প্রদানকারীদের চাকরির স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা। এছাড়া প্রত্যেক কেন্দ্রে মাত্র একজন করে নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এদিকে প্রত্যেক কেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য একজন করে ড্রাইভার রয়েছে। ফলে অনেক সময় জরুরি সেবা দিতে বেগ পেতে হয়।
তবে সার্বিকভাবে প্রকল্পটি দরিদ্র মা ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধি এবং এই সেবার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বিনামূল্যে দরিদ্রদের দেওয়া হচ্ছে।এছাড়া নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রদত্ত সেবার মান উন্নয়ন এবং নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ ও কার্যকর সেবা দেওয়ায় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সহায়তা করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আপত্তির জবাব পাওয়া যায়নি
প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আইএমইডি’র সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবেদনটি কেবল চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।আমরা নিজেদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ করিনি। প্রকল্পের দূর্বল দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব। তৃতীয় পক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। যাতে নিরপেক্ষভাবেই প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব হয়।
প্রকল্প অফিস ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা,প্রকল্প অফিস যথাসময়ে অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থ হলেও টাকা আনডিসবাস্টমেন্ট থাকার জন্য সরকারের পক্ষ হতে কোন প্রকার ফি দিতে হয়নি। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত তিনটি অর্থবছরের অডিট সম্পন্ন হয়েছে এবং মোট ১৪টি আপত্তি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে বাকি ১৬ টি আপত্তির জবাব দেওয়া হয়নি।
অন্য হাসপাতালেও রেফার করা হয়
শহরের দরিদ্র হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাই প্রকল্প থেকে সেবা নিয়ে থাকেন। তবে জটিল রোগীদেরকে যেমন, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারের রোগীদের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও নগর মাতৃসদনে ভায়া টেস্ট ও স্ক্যাকানিংয়ের মাধ্যমে বাছাই করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিসহ সব বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়ে থাকে।