২০১৬ থেকে ২০২২ এই ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে খানাপ্রতি (হাউজহোল্ড বা একক গৃহস্থালি) আয় বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। এই আয় মাথাপিছু ৭ হাজার ৬১৪ টাকা। তবে এই আয়ের সাথে ব্যয়ও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। খানার মাসিক গড় আয় বর্তমানে ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। ২০১৬ সালে এ আয় ছিলো ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা।
আয়বৃদ্ধির সাথে সাথে ২০২২ সালে গড় মাসিক ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৬ সালে যা ছিলো ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা।হাউজহোল্ড ও ইনকাম এন্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) বা খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ এর মাধ্যমে এ তথ্য তুলে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরতে বুধবার বিবিএস ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড় মাথাপিছু আয় দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬১৪ টাকা।
মাথাপিছু এ গড় আয় ১২ মাসে দাঁড়ায় ৯১ হাজার ৩৬৮ টাকা যা বর্তমান বাজার মূল্যে ১ হাজার ডলারের বিনিময় মূল্যের চেয়ে কম।
২০১৬ সালে গড় মাথাপিছু আয়ের পরিমান ছিলো ৩ হাজার ৯৪০ টাকা। বারো মাসে যার পরিমাণ হয় ৪৭ হাজার ২৮০ টাকা।
বিবিএস এর ২০২২ সালের জরিপে জানা যায়, একটি খানা খাদ্যপন্য ক্রয় সংক্রান্ত ব্যয় করে আয়ের ৪৫.৮ শতাংশ আর খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় করে ৫৪.২ শতাংশ। ২০১৬ সালের জরিপে যথাক্রমে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাতে খানাপ্রতি এ ব্যয়ের হার ছিলো ৪৭.৭ শতাংশ ও ৫২.৩ শতাংশ।
২০১৬ সালে জনপ্রতি দৈনিক ক্যালরি গ্রহনের গড় পরিমান ছিলো ২২১০.৪ কিলোক্যালরি যা ২০২২ সালে এসে সামান্য বেড়ে হয়েছে ২৩৯৩ কিলোক্যালরি।
জরিপে বলা হয়, আগের চেয়ে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট এ লেনদেন করার খানা সংখ্যা বেড়েছে।
তবে জরিপে শ্রেণিভেদে খানা প্রতি আয়ে বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে। ২০২২ সালে এসে এ বৈষম্য শুন্য দশমিক ৪৯৯ শতাংশ হয়েছে। ২০১৬ সালে ছিলো শুন্য দশমিক ৪৮২ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, এতোদিন উন্নয়নে গ্রাম ও শহরে বৈষম্য ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বৈষম্য নিরসনে প্রথম জোরালো ভূমিকা নিয়ে কাজ করছেন। আমরা তার সুফল পাচ্ছি ও ভবিষ্যতে আরো পাবো।
মন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিনামূল্যে ও সাশ্রয়ী মূল্যে চাল, ডাল, তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিম্ম আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের মনোবল শক্ত রাখতে ও ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, তবে বৈষম্য একটা আছে সেটা আইনগত। খালে, বিলে, নদীতে ও বনে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবিদের প্রবেশাধিকার খর্ব করে রাখা হয়েছে। যাদেরকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তারা বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে ফায়দা লুটছে। এদেরকে এ সুযোগ দেওয়া বন্ধ করা উচিত ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের জন্য প্রবেশাধিকার পূন:প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
রাষ্ট্রের স্বার্থ সবকিছুর উর্ধ্বে রেখে আমরা তথ্য তুলে আনি ও পরিবেশন করি। জেনেশুনে ভুল তথ্য পরিবেশন বা বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা আমরা করবো না। কারণ এসব তথ্য মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) সহ নানা হিসেবে কাজে লাগে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এনডিসি, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারন অর্থনৈতিক বিভাগের সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদ, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি মিজ জিমেনা ভি ডেল কারপিও এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের যুগ্ম-সচিব ড. দিপংকর রায়।