২০২২ সালে বয়সসীমা পার হয়ে গেলেও চাকরি না পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলে আলোচনায় উঠে আসেন বাদশা মিয়া। এস কে এম লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিতে এবার তাঁর চাকরি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বাদশাকে চাকরির প্রস্তাব দেন ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান মুফতি সাইফুল ইসলাম। বাদশা মিয়া কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ নিয়ে এস কে এম লিমিটেড কোম্পানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাদশা মিয়া বলেন, কোম্পানিতে আমি আমার যোগ্যতা এবং উদ্যমতার পুরোটাই দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা আমাকে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমি জীবনের দীর্ঘ একটা সময় পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করেছি। শিক্ষাগত যোগ্যতার বেশ কয়েকটি সার্টিফিকেট অর্জন করেছি। এরপর এসব সার্টিফিকেট নিয়ে যখন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছি। কেউ আমাকে চাকরি দেয়নি। ইন্টারভিউ দিতে দিতে পায়ের জুতা ক্ষয় করে ফেলেছি। তবুও সামান্য বেতনের কোনো চাকরি আমার ভাগ্যে জোটেনি। সেই হতাশা থেকেই ফেসবুক লাইভে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলি এবং গ্রামেই কৃষিকাজ শুরু করি। এস কে এম লিমিটেড কোম্পানির প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তারা দুর্দিনে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।
এস কে এম লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি বাদশা মিয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকরির আবেদন করেও চাকরি পায়নি। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে ফেসবুকে লাইভে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলে। এরপর আমরা তাকে চাকরির প্রস্তাব দেই। দুয়েক দিনের মধ্যেই সে ঢাকার কামরাঙ্গিরচরে আমাদের কোম্পানির মূল ব্রাঞ্চে জয়েন করবে।
তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানিতে চামড়ার জুতা ও পাঞ্জাবি তৈরি এবং বিক্রয় করা হয়। দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের শোরুম আছে। পাশাপাশি আমরা স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করি। ইতোপূর্বে আমরা আলেমদের মাঝে ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বাদশাকেও আমরা আমাদের সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে চাকরি দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক পাস করেন বাদশা মিয়া। তবে অর্থের অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। এর আগে বিজ্ঞান বিভাগে ২০০৭ সালে দাখিল এবং ২০০৯ সালে আলিম পাস করেন। প্রায় ২০টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও চাকরি পাননি। এর মধ্যে পার হয়ে যায় সরকারি চাকরির বয়সসীমা। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে নিজের অর্জিত সব একাডেমিক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন।