বঙ্গভবনে তোশাখানা জাদুঘরসহ যা যা দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম

বঙ্গভবনে তোশাখানা জাদুঘরসহ যা যা দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা

দেশের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত প্রাসাদ বঙ্গভবন সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। ইতিহাসের পালাবদল, রাজনৈতিক বিবর্তণ আর নানা ঘটনার নীরব সাক্ষী এই ভবনটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও সরকারি বাসভবন। এখন থেকে দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে এটি। উন্মুক্ত হলেই দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন তোশাখানা জাদুঘর, এয়ার রেইড শেল্টার, প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কারসহ নানা দর্শনীয় স্থান।

মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে তোশাখানা জাদুঘরের উদ্বোধন করে একে শতাব্দীকালের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গভবনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আবদুল হামিদ বলেন, বিদেশী রাষ্ট্রদূতসহ আগন্তুকরা পরিদর্শনকালে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে সক্ষম হবেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য এটি সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত থাকবে। আবার বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনেও যে কেউ তোশাখানাটি যাতে দেখতে পারে এবং বঙ্গভবন সম্পর্কে জানতে পারে সে উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

বঙ্গভবনের ইতিহাস

মুক্ত আকাশ, জলাধার আর অবারিত সবুজের সমাহারে গড়ে উঠা এই স্থাপত্যের গোড়াপত্তন ঘটে ১৯০৫ সালে। ওইসময় সৃষ্ট পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার নবাব পরিবারের দিলখুশা বাগানবাড়ির দক্ষিণাংশে লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের বাসস্থান হিসেবে অস্থায়ী লাটভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গভর্নরের অফিস ও বসবাসের জন্য নির্মিত হয় একটি টিম্বার প্যালেস বা কাঠের প্রাসাদ। স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের প্রধান শাসনকর্তা হিসেবে ১৯০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নবনির্মিত অস্থায়ী গভর্নমেন্ট হাউজে প্রবেশ করেন। মূলত এ দিন থেকেই বঙ্গভবনের যাত্রা শুরু। অচিরেই ভবনটি ‘দিলখুশা গভর্নমেন্ট হাউজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

১৯৪৭ সালে এটি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম গভর্নর ছিলেন স্যার ফ্রেডারিক বোর্ন। এ সময় ‘গভর্নমেন্ট হাউজ’ এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘গভর্নর হাউজ’। ১৯৬১ সালের ৯ মে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। ফলে তৎকালীন গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আযম খান ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কারের পরিবর্তে একটি নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এটি উদ্বোধন করেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্য ২৩ ডিসেম্বর গভর্নর হাউজে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভা করেন। ওই সভায় গভর্নর হাউজকে নতুনভাবে ‘বঙ্গভবন’ নামে নামকরণ করা হয়।

১৯৮৫ সালে বেশ বড় পরিসরে বঙ্গভবন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও অলংকরণের কাজে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। অভ্যন্তরীণ নান্দনিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে সংযোজন করা হয় দুর্লভ চিত্রকর্ম। ২০১৬ সালে বঙ্গভবনে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক সুইমিংপুল কমপ্লেক্স। ২০২১-২২ সালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির অফিস কক্ষ, হরিণ পুকুর, গ্যালারি হল, দরবার হল, ভিআইপি অপেক্ষাগার-১, এয়ার রেইড শেল্টার, কেবিনেট হল, বঙ্গভবন তোশাখানা যাদুঘরসহ ব্যাপক সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়।  

দর্শণার্থীরা যা যা দেখতে পারবেন

১. তোশাখানা

তোশাখানা অর্থ এমন একটি ভাণ্ডার যেখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন রকমের মহামূল্যবান উপহার সামগ্রী  সংরক্ষিত থাকে। এসব উপহার সামগ্রীর মধ্যে দেশি বা বিদেশি তৈজসপত্র, স্মারক মুদ্রা,  বিভিন্ন ধরণের স্মরণিকা, মহান ব্যক্তির প্রতিকৃতি অথবা আলোকচিত্র, শিল্পকর্ম, লোকশিল্প বা হস্তশিল্পের নমুনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য

স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রপ্রধানকে উপহার দেওয়ার রেওয়াজ চালু হলে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান বা খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ প্রদত্ত উপহারসামগ্রী প্রদর্শনের জন্য এখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিদেশি দূত ও খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ নানারকম শিল্পকর্ম, স্মারক, ক্রেস্ট ইত্যাদি উপহার হিসেবে দেয়ার কারণে তোশাখানার সংগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তোশাখানা থেকে আড়াইশো গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য প্রদান করা হয়েছে।

১৫০ বছরেরও অধিক পুরানো মানুক হাউস এর আগে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হত। উনিশ শতকে মানুক নামের এক আর্মেনিয় ব্যবসায়ী এখানে বসবাস করতেন।

২. এয়ার রেইড শেল্টার

১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় গভর্নরের নিরাপত্তার জন্য একটি এয়ার রেইড শেল্টার নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলেএটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালে এটি সংস্কার করে পুনরায় ১৯৬৫ সালের আদলে নিয়ে যাওয়া হয়।

৩. প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কার

তোশাখানার পাশেই প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কার। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিগণ গাড়িটি ব্যবহার করতেন। ট্রাস্কো ব্রেমেন নামে একটি জার্মান কোম্পানি নির্মিত  প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কারটি একটি অভিজাত এবং অতি-বিরল প্রসারিত লিমুজিন যা মূলত ডব্লিউ ১২৬ মার্সিডিজ-বেঞ্জ ৫০০ এসইএল মডেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।

এছাড়াও আধুনিক ল্যান্ডস্কেপে সাজানো বঙ্গভবনে থাকা দৃষ্টিনন্দন সবুজ উদ্যান, দুম্বা শেড, হরিণ পার্ক, দৃষ্টিনন্দন চারটি পুকুর ও একটি সুইমিং পুলসহ নানা স্থান দেখতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

Link copied!