নভেম্বর ৪, ২০২১, ০৯:০৭ পিএম
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ ঠিকানা মন্তব্য করে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের বেশ কয়েকটি লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে দেশের উন্নয়ন যাত্রায় অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটের ইকনোমিক জোনে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সুযোগ নেওয়ার আহবানও জানান তিনি। খবর বাসস’র।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) লন্ডনে কুইন এলিজাবেথ সেন্টারের চার্চিল হলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১: টেকসই প্রবৃদ্ধি অংশীদারিত্ব তৈরি ও রোড শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
ব্রিট্রেনের প্রিন্স চার্লস এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের একটি রেকর্ডকৃত ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। ব্রিটিশ বাণিজ্য নীতি প্রতিমন্ত্রী পেনি মর্ডান্টও এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘...জ্বালানি, নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, পর্যটন, জ্ঞান ভিত্তিক হাই-টেক শিল্প, আইসিটি খাত বিদেশী বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে, ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা এর মধ্যে যে কোনও একটি এবং এর বাইরেও বেছে নিতে পারেন’।
ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে আসার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সব সুযোগ পাবেন, আর কোনো বাধা থাকলে আমি তা দেখব।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা একক অর্থনৈতিক অঞ্চলেরও প্রস্তাব প্রদান করেন যেখানে একটি নির্দিষ্ট দেশের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা এই ধরনের একটি অঞ্চল নিজেদের জন্য নিতে পারেন।
প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক বিদেশী ও দেশীয় বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জনসংখ্যার সুফল এবং বিনিয়োগকারীরা যাতে প্রতিয়োগিতামূলক দামে দক্ষ মানবসম্পদ পায় তা নিশ্চিতের উপর তাদের দৃষ্টি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিসহ আমাদের সরকারি সংস্থাগুলো আপনাদের জন্য একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সম্ভাব্য সুফলের জন্য যথেষ্ট সুযোগ দিবেন।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সফলভাবে কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, আমি এইভাবে আরও কোম্পানিকে স্বাগত জানাতে চাই যাতে তারা এগিয়ে আসে এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে।"
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নতুন জাতির জন্মের পর থেকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য সর্বোত্তম সম্পর্ক উপভোগ করছে এবং প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাজ্য যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে উদার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি নেতৃস্থানীয় দেশ ছিল। আর এইভাবে আজ যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী।
তিনি বলেন, এরপর থেকে এই সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে আরও ফলপ্রসূ করে তুলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এই রোড শো ব্যবসা এবং বিনিয়োগ থেকে উচ্চ সুফলের পুরষ্কারসহ বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রেরণা জোগাবে। বাংলাদেশ আজ একটি পরিবর্তিত দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টার কারণে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ‘ভিশন ২০৪১’ পূরণ করে একটি উন্নত দেশ হতে এগিয়ে যাওয়া এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্য ঘোষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এডিবি আউটলুক ২০১৯ অনুযায়ী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। তিনি বলেন, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং সঠিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সুবাদে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে এডিবি উল্লেখ করেছে।
পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দ্রুত নগরায়ন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের ব্যবহার, মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ সম্প্রতি বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে; যোগাযোগ সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং রেল যোগাযোগসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছি।”
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে উপেক্ষিত দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের সংযোগ স্থাপনকারী রেলপথ বিশিষ্ট পদ্মাসেতু নির্মাণ করছে।“বাংলাদেশ খুব শিগগিরই মেট্রো-রেল যুগে প্রবেশ করছে।”
সরকারপ্রধান বলেন, শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের উৎপাদন ইতোমধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এই উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪০ হাজার মেগাওয়াট, ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা ক্রমাগত আমাদের আইনি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করছি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে এবং বিদেশী বিনিয়োগ সংসদের আইন এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির দ্বারা সুরক্ষিত।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি খাত এখন দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, ৬০টি দেশে এক বিলিয়ন ডলারের আইসিটি পণ্য রফতানি করছে, এটি ৫ গুণ বেড়ে ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার দাঁড়াবে। ফ্রিলান্স আইটি প্রফেশনালদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৬ লাখ। আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সঠিক জায়গা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আরএমজি রফতানিকারক দেশ, সবজি উৎপাদনকারী হিসাবে তৃতীয় অবস্থানে, অভ্যন্তরীণ মৎস উৎপাদনে তৃতীয়, ইন্টারনেট ফ্রিলান্সিংয়ে তৃতীয় এবং ধান উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।