রমজান আসার এখনও প্রায় দুই মাস বাকি। এরই মধ্যে চাল, ব্রয়লার মুরগী ও সয়াবিনসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি দরে পণ্য কিনতে কিনতে ক্রেতাদের পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের অনেকের দাবি, এ দেশে রমজানের দোহাই দিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা। এবার আগেভাগেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। সময়মতো বাজার মনিটরিং ও ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি খারাপ হবে এবার।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারাও নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজারে তেলের সরবরাহ একটু কম থাকলেও চালের সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে। রয়েছে ইন্ডিয়ান চালও। তারপরও ১৫ দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। বর্তমান বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে কারওয়ান বাজারের এক আড়তদার বলেন, চালের দাম এখন বৃদ্ধি। সরকার যখন ব্যবসায়ীদের এলসি করার জন্য বলছে তখন ঠিকভাবে এলসি করা হয়নি। যার ফলে দাম এক মাসের মধ্যে দুইবার বাড়ছে। কিন্তু এর কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। ইন্ডিয়ান চাল বাজারে ঢুকার পরও দাম না কমে উল্টা সে চালের দামও বেশি। দাম কমার কোন সম্ভাবনাও আড়তদাররা দেখছেন না।
দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে মান্নান রাইস হাউসের কর্ণধার আব্দুল মান্নান বলেন, বাজারের অবস্থা ভয়াবহ। চালের দাম বেড়েই যাচ্ছে। প্রতি কেজিতে ১টাকা/২টাকা বাড়তেই আছে। ক্রেতারা আমাদেরকে এই দামের ব্যাপারে দোষারোপ করছে, যে চালের দাম আমরা নাকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। এই দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
পাইকারী বাজারে ’স্বর্ণ ‘জাতের চাল ১৫ দিন আগে ২ হাজার ২শ টাকায় বস্তাপ্রতি বিক্রি হলেও এখন তা ২ হাজার ৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০০ টাকা বেড়ে ‘বিআর ২৮’চাল ২ হাজার ৪২০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ‘মিনিকেট’চালের বস্তা ৩ হাজার ১০০ টাকা এবং ‘নাজিরশাহ’চাল ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। চারজনের ছোট পরিবারে গড়পড়তা মাসে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল দরকার হয়। ফলে শুধু রান্নার তেলের পেছনেই এখন মাসে দেড় শ টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল ছাড়াও বাজারে এখন চালের দাম বেশ চড়া। বেড়েছে চিনির দামও।
দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বাজারে তীর ও ফ্রেশ ব্রান্ডের সয়বিন তেল ৫ লিটারের বোতলে বিক্রি হচ্ছে ৬১০ টাকায়। আর রুপচান্দা ও বসুন্ধরা তেলের দাম এক মাসের ব্যবধানে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ও। ওই দু্ই ব্যান্ডে ৫লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬৪০ ও ৫৯০ টাকা।
মুরগির বাজারের অবস্থাও বেশি ভালো না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুরগি ব্যবসায়ী মো. অবি বলেন, দাম এখন বেশি। গেছো মাসে যে মুরগি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি এখন সেই মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করছি। আগে খামারিরা যে বাচ্ছা ৫টাকা থেকে ৬টাকায় কিনত এখন সেই বাচ্ছা ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
জানুয়ারিতে ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ‘লেয়ার লাল’মুরগী বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আর ‘লেয়ার মুরগী বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৯০ টাকায়।
পণ্যের দামগুলো এভাবে বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন ক্রেতারা। বাজার করতে আসা গার্মেন্টস শ্রমিক মো. জয়নাল জানান, বাজার তো সবসময় উর্দ্ধমুখী। নিম্নমুখী খুব কম। তেলের দাম তো বাড়তি। তেল তো হুহু করে বাড়তেছে। ক্রয় সিমানার বাইরে চলে গেছে সব পণ্যের দাম।
তার পাশেই বাজারে আসা সরকারী কর্মচারী আহসান উল্লাহ বলেন, বর্তমানে তেলের দাম অনেক বেশি। চাউল কিনতে পুরো হিমসিম খাচ্ছি। বাজার পুরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে বাজারের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে যাবে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর এড়িয়ে গিয়ে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, দাম বৃদ্ধি কেন হচ্ছে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। তবে বাজার মনিটরিং চলছে। মনিটরিং আরও বাড়ানো হবে।