সংবিধান বাইবেল নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না: ফখরুল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৫, ২০২১, ০৯:২১ পিএম

সংবিধান বাইবেল নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না: ফখরুল

জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সংবিধান বাইবেল নয় যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, ‘সংবিধান কী একটা বাইবেল যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। জনগনের প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে আপনাকে। তারাও তো পরিবর্তন করেছে। দুর্ভাগ্যটা কোথায়? তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলো এবং ১৭৩দিন হরতাল করেছিলো। সেজন্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন’।

তিনি আরো বলেন, ‘আজ তারা জেনে গেছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেজন্য দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিধান রাখতে চায় তারা’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন হবে’-এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া জনগনের সাথে ধোকাবাজি’।  

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে অভিজ্ঞাতা হলো: (১) একেবারেই তাদের (সরকারের) নিজস্ব লোকজনকে প্রাধান্য দিয়ে গঠন করা হয়। (২) এটা জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু নয়। সার্চ কমিটি তারা করেছে, আমরা তো করি নাই’।

ফখরুল বলেন, ‘বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ‘এটা সম্পূর্ণ সরকার তার নিজের পছন্দমত লোকজনকে দিয়ে তৈরি করে এবং সেটাকে নির্বাচনে কাজে লাগায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হুদা (কেএম নুরুল হুদা) সাহেবের যে কমিশন সেই কমিশন পুরোভাবে সরকারের অনুগত। অনেক ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে দলীয় ভুমিকা পালন করেছে, যেটা কোনো মতেই গ্রহনযোগ্য না’।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচন কমিশন গঠনের সময়ে এবং যদি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে সেই নির্বাচনটা কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহনযোগ্য হয় না’।

এসময় মির্জা ফখরুল সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য টেনে বলেন, আগে নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত (সাখাওয়াত হোসেন) সাহেবরা যে নির্বাচন কমিশনে ছিলেন তারা খুব সুস্পষ্ট করে বলেছেন। তারা বলেছেন, ‘একটা সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকাটা সবচেয়ে জরুরী’।

‘সেই দৃ্ষ্টিকোন থেকে বলছি যে, আসলে ওটাই হচ্ছে প্রথম সংকটটা। নির্বাচন কমিশন খুব ভালো করলেন, একেবারে সমস্ত …, কিন্তু তারা কাজ করতে পারলো না। সরকার তাদের সাথে সহযোগিতা করলো না বা তাদেরকে কাজ করতে দিলো না। তখন তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না’।

গতকাল সোমবার শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে বিএনপি মহাসচিবের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

‘বিএনপিকে মানুষ কেনো ভোট দেবে’ প্রধানমন্ত্রীর এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ওনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) হাত থেকে বাঁচার জন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। ওনারা দেশের যে অবস্থা করেছেন, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নেই। চতুর্দিকে ভয়, ত্রাস আর সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নেই। এরফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে’।

‘জনগণ এই কারণে বিএনপিকে ভোট দে্বে যে, আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলে আজকে ৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়াচ্ছে। ৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়া সম্ভব নয় বলেই জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। বিনা পয়সায় সার দেবে কৃষকদের বলেছিলো সেখানে সারের দাম আকাশচুম্বি। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে চায় এবং যাকে খুশি তাকে দিতে চায়, সেজন্য বিএনপিকে ভোট দেবে। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। কারণ গত ২ বছরে সরকারের ব্যর্থতার কারণে করোনার সময়ে অর্থনৈতিক প্যাকেজের মাধ্যমে জনগনকে রক্ষা করা যেতো সেটা না করায় বেশিরভাগ কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, লোকজন ছাটাই হয়ে গেছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টারগুলো পুঁজি হারিয়েছে এবং সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান কমে গেছে। আজ দুর্ভাগ্যক্রমে এই দেশটাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে যেখান থেকে মানুষ এখন মুক্তি চায়, আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়, শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি চায়, এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়’।

বিএনপির বিগত সরকারের সফলতা তুলে ধরে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি একমাত্র দল যারা জনগনকে কিছুটা শান্তি দিয়েছিলো। মাইক্রো ইকোনমিক্সকে স্টেবল পজিশনে নিয়ে এসেছিলো। সেজন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে’।

ফখরুল আরো বলেন, ‘সরকার বলছে, অনেক উন্নয়ন করেছে। যদি এত উন্নয়ন করে থাকে তাহলে তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিচ্ছে না কেনো? আজ কেনো তারা সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসছে না, সমাধান করছে না?

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এতো কথা বলেন, এতো দাম্ভিকতা দেখান। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করেন দেখেন। মানুষকে ভোট দিতে দেন’।

নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন,  ‘যতগুলো ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি আছে, এমনকি জাতিসংঘের কাছ থেকে এমন কথা আসে যে, ‘‘আমরা নির্বাচনে সহযোগিতা করতে রাজী আছি যদি বাংলাদেশ সরকার বলে’’। এরকম প্রশ্ন কেনো আসে? কারণ এই নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি কারো আস্থা নেই। না জাতির, না আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর’।

Link copied!